যোগাযোগ উন্নয়নে আরো এক ধাপ অগ্রগতি

ঢাকায় দ্রুতগতির প্রথম উড়ালসড়ক (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) চালু বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক ঘটনা। এর দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশটি উদ্বোধন করেছেন।

আগামী বছরের জুনে তেজগাঁও থেকে মগবাজার-কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী অংশ চালু হবে। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার এই নবযাত্রাকে আমরা স্বাগত জানাই।

নকশা অনুসারে, উড়ালসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। তবে কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশে আপাতত যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। পুরো পথ চালু হলে তা যানবাহনে পাড়ি দিতে ২০ মিনিট লাগবে। কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশ পাড়ি দিতে সময় নেবে ১২ মিনিট।

সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উড়ালসড়ক দিয়ে আট ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে—বাস, মিনিবাস, কার (সেডান), মাইক্রোবাস, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি যা জিপ নামে পরিচিত), কয়েক ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ও পিকআপ। এই উড়ালসড়কে চলাচলের জন্য যানবাহনের মালিককে টোল দিতে হবে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এই সড়কে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার যান ও বাইসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের (পিপিপি) ভিত্তিতে ঢাকার দ্রুতগতির উড়ালসড়কের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। নির্মাণকাজের ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ থাইল্যান্ড ও চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান বহন করছে। বাকি ২৭ শতাংশ দিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে, ২৫ বছরে (সাড়ে তিন বছর নির্মাণকাল বাদে) টোল থেকে আয় করে বিনিয়োগকারী পুঁজি ও মুনাফা তুলে নেবে। অর্থাৎ ২৫ বছর পর বাংলাদেশ মালিকানা ফিরে পাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ঢাকার জন্য ২০ বছরের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুমোদন করা হয়, যার আওতায় মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক, বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণসহ নানা প্রস্তাব ছিল। ২০১৫ সালে এটি হালনাগাদ করা হয়, যাতে ঢাকার যানজট নিরসনে সরকার এই পরিবহন পরিকল্পনা ধরে ঢাকা ও এর আশপাশে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঢাকার উড়ালসড়ক প্রকল্পটি সেই পরিকল্পনারই অংশ।

এর আগে ঢাকায় মেট্রোরেলও চালু হয় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। নিত্য যানজটের শহরে মেট্রোরেল ও উড়ালসড়ক নিঃসন্দেহে যাত্রীদের স্বস্তি দেবে। কিন্তু সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়।

এই দুই পরিবহনব্যবস্থার বাইরে থেকে যাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রতিদিনই ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে। তাই পরিবহনের বিষয়টি দেখা দরকার নগরায়ণের সার্বিক পরিকল্পনার আলোকে। দ্রুতগামী পরিবহনের পাশাপাশি আবাসনসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে মানুষের ঢাকামুখী স্রোত।

যদি ২০১৫ সালে উড়ালসড়কের কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে, ইতিমধ্যে আট বছর চলে গেছে। কর্তৃপক্ষ ত্রমাগত প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বাড়িয়েছে। করোনার কারণে দুই বছর অনেক প্রকল্পের কাজ থেমে থাকলেও মেট্রোরেল ও উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ অব্যাহতই ছিল। তারপরও কেন এত বিলম্ব হলো, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা চাওয়াও নিশ্চয়ই অন্যায় হবে না।

আমাদের প্রত্যাশা, উড়ালসড়ক ও মেট্রোরেলের বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে।