আমদানির অনুমতি দিতেই কমল আলুর দাম

আমদানির অনুমতি দিতেই রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকার বেশি। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু মানভেদে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর এক মাস আগে তা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরেই দেশে আলুর বাজার চড়া। প্রতি কেজি আলুর দাম ৭০ টাকায় উঠে যায়। চলতি মৌসুমে বাজারে নতুন আলু উঠলেও দাম আশানুরূপ কমেনি। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৯৪ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।

অনুমতির পর ভারত থেকে হিলিবন্দর দিয়ে গতকাল দুপুরে মাত্র ২৫ টন আলু দেশে ঢুকেছে। এরপরই দাম কমতে শুরু করেছে। এর আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকলে প্রথম ধাপে ১৮ সেপ্টেম্বর ও পরে কয়েক ধাপে সরকার ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। কিন্তু পরে মাত্র ৬১ হাজার ৯৫০টি ডিম দেশে ঢুকলে দাম দ্রুত কমতে শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। কিন্তু একশ্রেণির অসত্ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই পণ্যের দাম বাড়ে। এই সিন্ডিকেট আমদানিকৃত পণ্য দেশে ঢুকতে শুরু করলেই দাম কমিয়ে দেয়। তাই সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে জোরালোভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। যাতে কেউ অবৈধভাবে পণ্য মজুত করতে না পারে।

উল্লেখ্য, আর মাত্র এক মাসের কিছু বেশি সময় পরই শুরু হচ্ছে রমজান। কিন্তু তার আগেই খুচরা বাজারে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা থেকে শুরু করে মাছ, ডিম, সবজি সবকিছুর দামই বাড়তে শুরু করেছে।

এসব পণ্যের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা ডলার-সংকট ও ঋণপত্র খোলা নিয়ে জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবসহ বিভিন্ন সমস্যাকে দায়ী করেছেন। তবে ভোক্তারা বলেছেন, প্রতি বছর রমজান শুরুর আগেই একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই সিন্ডিকেটের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে ভোক্তারা।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি মুগ ডালে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, ছোলা ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা, সব ধরনের চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৬২ থেকে ৭৫ টাকা, পাইজাম/লতা ৫২ থেকে ৫৬ টাকা, ইরি/স্বর্ণা ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, খোলা সাদা আটায় তিন টাকা বেড়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, প্যাকেট ময়দায় কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে পাঁচ টাকা বেড়ে ১৫৮ থেকে ১৬৫ টাকা, ডিমের হালিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে গরুর মাংসের দামও। গত প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় গরুর মাংসের দামে কিছুটা হলেও স্বস্তি এসেছিল। সেই স্বস্তিও এখন মিলিয়ে যাচ্ছে। বাড়তে শুরু করেছে গরুর মাংসের দাম। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায় পাওয়া গেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, মাংস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আবার দাম বাড়িয়েছে। তা না হলে দু্ই সপ্তাহের মধ্যে এমনকি হলো যে, আবার গরুর মাংসের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রমজানে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে ভোজ্য তেল, চিনি, চাল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমাতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা কার্যকর হলে ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরবে। জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি ভোজ্য তেল ও চিনির আমদানি শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, চিনির ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে। সেটা কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ শুল্কের প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রমজানে আরেকটি প্রয়োজনীয় পণ্য খেজুর। ইনভয়েস ভ্যালুতে (চালান মূল্য) খেজুরের কর নির্ধারণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, চালসহ যেসব কৃষিপণ্য রয়েছে। সেসব পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কৃষি, খাদ্য ও বাণিজ্য—এই তিন মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করবে।