আল জাজিরার খবর ফেসবুকে বুস্ট করেছে মার্কিন দূতাবাস

যুক্তরাষ্ট্র আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তিক্ত সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার কথা পর্যন্ত উঠেছিল, এর পরিপ্রেক্ষিতে আল জাজিরাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গুটিয়ে নিতে চেয়েছিল তাদের কার্যক্রম।

সেই আল জাজিরার একটি রিপোর্ট ফেসবুকে শেয়ার করেছে বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। শুধু তাই নয়, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ওই নিউজলিংক বুস্টও করছে তারা। আল জাজিরার রিপোর্টটি বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতদের নিয়ে। গত ২২ মে আল জাজিরায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ার কথা এবং মানবাধিকার কর্মীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের ঘটনাকে ফিলিফিন্সের মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

একদিকে আল জাজিরার বিরোধিতা করা এবং একইসঙ্গে আল জাজিরার প্রতিবেদনকে নিজেদের ফেসবুক পেজে প্রচার করার বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি হিসেবে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।

তিনি বলেন: এটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দ্বৈত চরিত্র। তারা যখন মনে করছে কোনো বিষয় তাদের পক্ষে যাচ্ছে তখন সমর্থন দিচ্ছে, আবার পক্ষে না গেলে ব্লক করছে। এটা তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

‘‘আলজাজিরা পুরো ইসলামপন্থী, আর ট্রাম্পের ফরেন পলিসি অ্যান্টি ইসলাম। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণ করলো যে, তারা শুধু সেই বিষয়গুলো ব্যবহার করে যেগুলো নিজেদের পক্ষে যায়। নিজেদের বিপক্ষে গেলে সেটার বিরোধিতা করা শুরু করে তারা। এটাকে আমরা বলতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নীতি।

যেই আল জাজিরাকে সে ক্রেডিবল মনে না করে বায়াস মনে করছে তখন সেটাকে ব্লক করছে, আবার যখন সেই আল জাজিরা তাদের মতো করে কথা বলে তখন সেটা শেয়ার করছে’’, বলেন রোবায়েত ফেরদৌস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারি অধ্যাপক শেখ সামস মোরসালিন বলেন: এটাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভাষায় বলা যায় ডিক্লারেটিকালি পসচার। এটা হলো যে, আমি যেটা ডিক্লেয়ার বা ঘোষণা করছি, কাজে সেটা প্রমাণ করছি না। ওই রকম জায়গা থেকে যুক্তরাষ্ট্র যা বলে তা করে না। তাদের কথা ও আচরণে বেশ ফারাক থাকে।

‘‘যেমন যদিও তারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলে বা প্রমোট করার কথা বলে আসে। কিন্তু পাকিস্তানে তারা ডেমোক্রেসি বাদ দিয়ে সেনা সমর্থিত স্বৈরশাসনকে প্রমোট করেছে। আল জাজিরার মালিকানা দেখলে যদিও মনে হয় এটা মধ্যপ্রাচ্যের, আসলে এটা ইহুদীদেরও। জিউসদের প্রভাবিত করার মতো একটা ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টা হয়েছে আমরা যাকে পছন্দ করছি না, সে আমার পক্ষে কথা বললে আমরা তাদের কোট করি আর না বললে আমরা সেটা বিরুদ্ধচারণ করি। তবে প্রভাব বিস্তারকারী গণমাধ্যমগুলো থেকে দূরে থেকে কাজ করা কঠিন।’’

নাইন ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে হামলার পর বেশ কয়েকবার ওসামা বিন লাদেনের বক্তব্য প্রচার করায় যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ আল জাজিরাকে বাঁকা চোখে দেখে থাকে। জানা যায়, দেশটির নামকরা টিভি তারকাদের ভিড়িয়েও দর্শক টানতে পারেনি কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যম। ২০১৫ সালে বছর জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে আল জাজিরার দর্শক ছিলো মাত্র ১৯ হাজার।