ইউপি চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন ডিজিটাল উদ্যোক্তা বাহারুল
মাগুরা প্রতিনিধি : চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ঘাড়ে নিয়ে মামলা থেকে মুক্তির আশায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মাগুরা সদরের কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের ডিজিটাল উদ্যোক্তা বাহারুল ইসলাম। লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রায় ৫ বছর ধরে ডিজিটাল উদ্যোক্তা হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে ই-সেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বাহারুল।
গত ১৩ জুন রাতে ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১৬ বস্তা চাল চুরির সময় গ্রাম পুলিশ আবু সুফিয়ানসহ ২ ভ্যান চালক হাতেনাতে আটক হয়। চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন এর প্ররোচনায় এ ঘটনার সাথে ডিজিটাল উদ্যোক্তা বাহারুলের নাম জড়িয়ে একটি মামলা দেয় ওই ইউনিয়নের সচিব মোঃ আমীর হোসেন। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনের চাবি কখনো বাহারুলের কাছে থাকে না। ওই চাবি তার কাছে থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা বলে জানিয়ে বাহারুল দাবী করেন- পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানের সময়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করায় বাহারুলের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন। যার কারণে তাকে সায়েস্তা করতে ও নিজে মামলা থেকে বাঁচতে ভিজিএফ এর চাল চুরির মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছেন।
বাহারুল ইসলাম লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন – কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদে ২০১২ সালের নভেম্বর মাস থেকে তিনি (ইউডিসি) উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করছেন। ২০১৬ সালের ৪ জুন কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসাবে মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন শপথ অনুষ্ঠানের দিনে প্রকাশ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে ডিজিটাল ই সেবা কেন্দ্রের আগের চেয়ারম্যানের আমলে নিয়োগকৃত উদ্যোক্তাদের বদলে ফেলার প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাব জেলা প্রশাসক প্রকাশ্যে নাকোচ করে দিলে তিনি বিভিন্ন সময়ে বাহারুলকে হয়রানি করতে থাকেন। এ অবস্থায় গত ১৩ জুন রাতে কুচিয়ামোড়া ইউনিয়ন পরিষদের হল রুম থেকে ১৬ বস্তা ভিজিএফ এর চাল চুরি হয়। যার সাথে জড়িত গ্রাম পুলিশ আবু সুফিয়ান এবং দুই ভ্যান চালকসহ ঘটনাস্থল থেকে আটক হয়। এই সুযোগে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের নির্দেশে ইউপি সচিব মোঃ আমীর হোসেন চাউলের গোডাউনের চাবি উদ্যোক্তা বাহারুলের কাছে ছিল ও তিনি চাবি দিয়ে তালা খুলে গোডাউন থেকে চাল সরিয়ে নিতে সহায়তা করেছেন মর্মে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দেয়। ওই মামলায় অন্য তিন আসামীর সাথে বাহারুলকে ৪ নং আসামী করা হয়। বাহারুল কোন সময়ই অফিসের চাবি সংরক্ষণ করেন না বলে দাবী করেন। মামলায় জড়িয়ে তাকে ডিজিটাল ই সেন্টার থেকে বের করে দিয়ে নতুন কাউকে বসানোর জন্যই এ ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে মাগুরার লোকাল গভার্ণমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম (এলজিএসপি) ’র জেলা সমন্বয়কারি মো: শামসুজ্জ্হো জানান- ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়াল অনুযায়ী ইউনিয়নের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চেয়ারম্যান এর উপর বর্তায়। ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনসহ যে কোন ঘরের চাবি তিনি কাউকে দিলে তার দায় দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।
মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছা. আক্তারুন্নাহার জানান- বিষয়টি আমরা জেনেছি। বে আইনিভাবে কাউকে মামলায় জড়ানো হলে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান- বাহারুল একটি শিল্পী পরিবারের সন্তান। তার দেয়া একটি দরখাস্ত ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এসেছে। সে যেন কোনক্রমেই হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব।
মামলার বাদী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আমির হোসেন জানান- ঘটনার দিন ডিজিটাল সেন্টারের চাবি প্রধান আসামী গ্রাম পুলিশ আবু সুফিয়ানের কাছে ছিল। ধরা পরার পর আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীদের দেয়া তথ্যমতে বাহারুলের নাম এসেছে।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বাহারুলের সাথে কোন ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে জানান- বাহারুলের বাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে হওয়ায় তার কাছে প্রায়ই চাবি থাকতো। ঘটনার দিন সে তার কাছে রাখা চাবি দিয়ে সন্ধ্যায় পরিষদের তালা খুলে দিয়ে বাড়িতে চলে যায়। সে হিসেবেই তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বাহারুল ইসলাম জানান- এলাকার মানুষের উপকার ও নিজের স্বকর্ম সংস্থানের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একজন সৈনিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করছি। এর মধ্য দিয়ে স্বকর্মসংস্থানের চেষ্টা ছিল। কিন্তু বিনা অপরাধে মামলার আসামী হয়ে প্রতি নিয়ত আশংকার মধ্য দিয়ে সময় কাটছে। কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক তথ্য উদঘাটনের দাবী জানাচ্ছি।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন