সানি-নাজমুল আমাকে বাঁচতে দিলো না

মাগুরায় বখাটের অত্যাচারে নবম শ্রেণীর ছাত্রীর আত্মহত্যা

মাগুরা প্রতিনিধি : মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে দেহ ব্যবসায়ি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় মিতাকে। সেখান থেকে পুলিশের মাধ্যমে মুক্তি পেলেও জীবন থেকে মুক্তি পেলোনা মিতা। অবশেষে সেই বখাটের অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্রী মিতার। আর মৃত্যুর আগে তার শেষ আর্তনাদ ছিলো বলছিল‘সানি-নাজমুল আমাকে বাঁচতে দিলো না’।

ঘটনাটি ঘটেছে শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামে। ওই গ্রামের গোলাম কিবরিয়া কন্যা মিতা স্থানীয় গোবরা পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বুধবার স্কুলে গিয়ে মিতা বিষপান করে। প্রথমে তাকে শালিখা ও পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই সে মারা যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়না দতন্ত শেষ সন্ধ্যার নিজ গ্রামে তার মরদেহ দাফন করা হয়। এদিকে বখাদের অব্যাহত হুমকীর কারণে মিতার পরিবার এখনো এ ঘটনায় মামলা করেন নি। এমনকি আতংকে কিছু বলতে চাইছেন না।

মোবাইল ফোনে শুক্রবার মিতার বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শালিখার হরিশপুর গ্রামে ভাইয়ের শ্বশুর বাড়িতে আসা-যাওয়ার সুযোগে যশোরের চুড়ামনকাঠি এলাকার সানি ওরফে রাজা নামে এক যুবক তার মেয়ের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। পরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মিতার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে সানি। পাশাপাশি এক বছর আগে স্থানীয় গোবরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে তার নাবালিকা মেয়ে মিতাকে সানি ওরফে রাজা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে দেহ ব্যবসায়ি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়। এ ঘটনায় তিনি শালিখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন । পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অপহরনের ১৫ দিন পর ঢাকার কাফরুল এলাকার একটি বাসা থেকে মিতাকে উদ্ধার করে। পরবর্তিতে মিতাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসা করানোর অপরাধে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার কাছিহারা গ্রামের গোলজার শেখের পুত্র নাজমুল শেখ ও বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার খাসতাবক গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর স্ত্রী শাহিদা বেগমকে আটক করে। পরে এ ঘটনায় শালিখা থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে নাজমুল, শাহিদা ও সানি ওরফে রাজার নামে মামলা হয়। পুলিশ সানিকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও ঢাকা থেকে আটকৃত দুই জনকে ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরে জেল হাজত খেটে দুই আসাসী জামিনে মুক্ত হয়। এদিকে মিতা বাড়ি ফিরে সুস্থ হয়ে আবারো লেখাপড়া শুরু করে। এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে ভাল ফলাফল করে নবম শ্রেণীতে উত্তির্ণ হয়। কিন্তু সম্প্রতি সানি ও কামরুল তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মোবাইলে ও বিভিন্ন লোক মারফৎ তাকে চাপ দিতে থাকে। একইভাবে মোবাইল ফোনের পাশাপাশি এলাকায় এসে মাঝে মধ্যে সানি মিতাকে উত্যক্ত করতে থাকে। মামলা তুলে না নিলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার করা হবে বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তাদের মানসিক এ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বুধবার সকালে স্কুলে গিয়ে মিতা বিষপান করে। এ সময় তাকে চিকিৎসার জন্য শালিখা ও পরে যশোর ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই রাতেই তার মৃত্যু ঘটে। ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে মিতার দাফন সম্পন্ন হয়। মিতার বাবা বলেন, বিষপানের পর সে বার-বার বলছিল‘সানি-নাজমুল আমাকে বাঁচতে দিলো না’।

গোলাম কিবরিয়া জানান, এ ঘটনার পর অভিযুক্তরা এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে অব্যাহতভাবে তাকে হুমকী দিচ্ছে। এমনকি বাড়ি থেকেক বের হতে পর্যন্ত দিচ্ছে না। তাদের ভয়ে তিনি এখনো মামলা করেননি।

শালিখা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘হরিশপুর গ্রামের স্কুল ছাত্রী মিতার আত্মহত্যার বিয়ষটি আমি শুনেছি। পরিবার অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইপিুর্বে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ ও ধর্ষনের অভিযোগে মিতা বাবার দায়ের করা মামলার নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ’।