ঈদের দিন মামুনুল হক কারাগারে যা খেলেন

কারাগারে বন্দিদের জন্য প্রতি ঈদেই বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই খাবারের তালিকায় থাকে মাছ, মাংস, পোলাও, ডিম, ফিরনি-পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি। এবারও এ ধরনের খাবারের আয়োজন থাকছে দেশের সব কারাগারেই।

আর সব বন্দির মতো শুক্রবার (১৪ মে) ঈদুল ফিতরের দিন এই বিশেষ খাবার পেয়েছেন নাশকতা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হকও।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে মুক্তির প্রার্থনায় সারাদেশে সীমিত পরিসরে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সাধারণ মানুষের মতো সীমিত পরিসরেই ঈদের আনন্দে মেতে উঠেছেন কারাবন্দিরাও।

জানা গেছে, সকাল ৭টায় মুড়ি আর পায়েস দিয়ে ঈদ উদযাপন শুরু করেন ঢাকাসহ দেশের ৬৮টি কারাগারের বন্দিরা। প্রতিবার কারাগারের ভেতরের মসজিদে নামাজ আদায়ের পর একসঙ্গে সকালের খাবার খেলেও, এবার নিজ নিজ সেলে নামাজ আদায় করেন তারা, সেখানেই পৌঁছে দেয়া হয় খাবার। কারাবন্দিরা নিজ নিজ সেলের অন্যান্যদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন।

নতুন বন্দি হিসেবে কারাগারে যাওয়ার পর একটি ওয়ার্ডের আইসোলেশন সেন্টারে রয়েছেন মামুনুল হক। তিনি সেখানে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। সকালে তাকেও মুড়ি আর পায়েস দেয়া হয়েছে।

জুমার নামাজের পর বন্দিদের জন্য সাদা ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। তরকারি হিসেবে দেয়া হয়েছে ডাল, রুই মাছ আর আলুর দম। রাতের বিশেষ আয়োজনে তারা পাবেন পোলাও। এর সঙ্গে থাকবে গরুর মাংস, ডিম, মিষ্টান্ন এবং পান-সুপারি। যারা গরুর মাংস খান না তাদের জন্য থাকবে খাসির মাংস।

অন্য বন্দিদের মতো মামুনুল হককেও একই খাবার দেয়া হয়েছে। রাতে তার জন্যও রয়েছে পোলাও, গরুর মাংস, ডিম, মিষ্টান্ন এবং পান-সুপারি।

এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, কারাগারের রেওয়াজ অনুযায়ী, বন্দিদের ঈদের খাবার দেয়া হয়েছে। বছরের দুই ঈদে তাদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। আগে প্রতি ঈদে কারাবন্দিরা পরিবারের সদস্যদের আনা খাবার খেতে পারতেন। তবে এবার করোনার কারণে বন্দিদের সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় খাবার আনতে পারছেন না তারা। কিন্তু তারা পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারবেন।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মমিন বলেন, আজ ঈদের দিন সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কারাবন্দিদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। তাদের সঙ্গে কুশলাদিও বিনিময় হয়েছে। ঈদের দিন সরকার নির্ধারিত বন্দিদের জন্য রয়েছে উন্নতমানের খাবার ব্যবস্থা।

মামুনুল হকের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, সব বন্দির জন্য একই খাবারের আয়োজন হয়েছে। সবাই একই খাবার খাবেন। অন্যান্য দিনের থেকে প্রতিবারই ঈদের দিন একটু উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা হয়। এবার যেহেতু করোনা মহামারির কারণে বন্দিদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়দের সাক্ষাৎ বন্ধ রয়েছে, সে কারণে ঈদের পরদিন, অর্থাৎ শনিবারও অনেক কারাগারে উন্নত খাবার দেয়া হবে।

মামুনুল হক বিভিন্ন সময় সরকারবিরোধী মাঠ গরম করা বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। তবে গত মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আগমনের হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন তিনি।

এসব সহিংসতার ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ জনতার হাতে অবরুদ্ধ হন তিনি। যদিও পরে সেই কথিত স্ত্রীই তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

১৮ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর গত ১৯ এপ্রিল তাকে মোহাম্মদপুর থানার হামলা, মারধর ও চুরির মামলায় প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল হেফাজতের সমাবেশকে ঘিরে ২০১৩ সালের পল্টন ও মতিঝিল থানার দুই মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় মামুনুলের। গত ৪ মে তৃতীয় দফায় তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর গত ১২ মে সেই ধর্ষণ মামলাসহ মহাসড়কে সহিংসতার পাঁচ মামলায় মামুনুল হকের তিনদিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত করা হয়।

সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পর মামুনুল হককে রিমান্ডে এনে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।