উচ্চ রক্তচাপে ক্ষতিকর যে ৮ খাবার

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে রক্তের চাপ বেশি থাকলে তবেই একে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। যে কোন বয়সে হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ।

চিকিৎসকরা বলেন, হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ থাকা শরীরের পক্ষে বেশি ক্ষতিকারক। এতে হার্ট অ্যাটাক, সেরেব্রাল অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই রোগের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধেরও কোন কমতি নেই। কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন ঘটিয়ে আপনিও এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ এবং উপসর্গ নেই। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা,  দ্বিধাগ্রস্থতা, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। রক্তচাপের মাত্রা ১২০/৮০ এর চেয়ে বেড়ে গেলে বলা হয় হাই ব্লাড প্রেসার এবং কমে গেলে লো ব্লাড প্রেসার।

উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর উচিত রক্তচাপ বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করে সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। এবার জেনে নেয়া যাক উচ্চ রক্তচাপে যে ৮টি খাবার ক্ষতিকর :

লবণ

উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম কারণ হল শরীরে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য লবণ খুবই ক্ষতিকর। খুবই সীমিত পরিমাণ লবণ দিয়ে খাবার তৈরি করে খাবেন। খাবারের সঙ্গে বাড়তি লবণ নিয়ে খাওয়া এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। একই সঙ্গে বিট লবণ এবং অন্যান্য মুখরোচক লবণ গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবার

বর্তমান যুগে ফাস্ট ফুড খাওয়া অনেকের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। প্যাকেটজাত এবং প্রসেসড ফুডগুলোর মধ্যেই সব থেকে বেশি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিকারক উপাদান থাকে। এই ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, প্রিজারবেটিভ, বিষাক্ত রঙ এবং ক্ষতিকারক চর্বি ডালডা ব্যবহার করা হয়। এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ রোগীর জন্য অধিক ক্ষতিকর। তাছাড়া তেলে ভাঁজা অধিক চর্বি যুক্ত মুখরোচক খাবার থেকেও বিরত থাকতে হবে।

কফি

কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য কফি খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ক্যাফেইন রক্তনালীকে সরু করে দেয়, ফলে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ফলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কফি ও অতিরিক্ত চা পানের অভ্যাস বাদ দিয়ে প্রতিদিন এক কাপ করে গ্রিন টি পান করবেন।

লাল মাংস

রেড মিট অর্থাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং মহিষের মাংস উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় বর্জন করা একান্তভাবে জরুরি। কারণ এসব লাল মাংসে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।

মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসম

উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় সেই সঙ্গে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। তাছাড়া মুরগির চামড়ায় উচ্চ মাত্রার চর্বি থাকে যা মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

চিনি যুক্ত খাবার

অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এই খাবারগুলো আমাদের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে শরীর মোটা হয়ে যায়। অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। মিষ্টির পরিবর্তে সামান্য মধু খেতে পারেন।

আচার এবং সস জাতীয় খাবার

যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের আচার এবং সস জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ আচার এবং সসে লবণ এবং চিনির পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা এই রোগীর শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়।

অ্যালকোহল এবং কোমল পানীয়

অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় খেলে দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এটাও মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়গুলোতে প্রচুর ক্যালোরি আছে যা ওজন বৃদ্ধি করে। তাই অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় কিংবা কোমল পানীয় না খেয়ে তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর শরবত খাবেন।

এছাড়া কখনও ননি বা ফ্যাটযুক্ত দুধ খাবেন না। দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রীর মধ্যে ননিবিহীন দুধ, টকদই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তথ্যসূত্র : স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জার্নাল এবং নিউট্রিশন অব বাংলাদেশ।