উপজেলায় ডাক্তার না থাকলে চাকরিচ্যুতি : প্রধানমন্ত্রী
জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে যেসব চিকিৎসক সেখানে যান না, তাদেরকে আর সুযোগ না দিয়ে চাকরিচ্যুত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সরকারি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে সরাকরি অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে গেলে বরাদ্দের জন্য অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য একটি তহবিল করার নির্দেশও দেন শেখ হাসিনা।
গত এক দশকে দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি হলেও চিকিৎসকদের মফস্বল শহর বা উপজেলা এবং গ্রাম এলাকায় না থাকার প্রবণতা রোধ করা যায়নি। বিশেষ করে দূর গ্রামের হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসকশূন্য অবস্থায় পড়ে থাকে। এমন অভিযোগও আছে, বেতন হওয়ার আগে এলাকায় গিয়ে উপস্থিতি খাতায় সই করে আসেন তারা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিলেও চিকিৎসকদের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারেননি।
এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বললেন, সরকারি চাকরি যদি কারও ভালো না লাগে, তাহলে তা ছেড়ে ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে ডাক্তারকে আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, যেই আমরা পাঠাচ্ছি উপজেলায়, সেখানে না থেকেই… সরকারি চাকরি হলেই এই সমস্যাটা হয়। যেই আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, যে কোনোভাবে কায়দা করে ঢাকায় এসে বসে থাকে।’
‘এভাবে যদি কেউ চলে আসে তাহলে তার তো চাকরি করার দরকার নাই। ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেই তো অনেক টাকা পাবে। তাহলে তারা বাড়ি চলে যাক, আমরা নিয়োগ দেবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অনেক প্রাইভেট ক্লিনিক আছে, তাতে কোথাও যদি তারা চাকরি পেয়ে যায়, তাহলে খুব ভালো কথা, ট্রেইনিং দিয়ে আমরা নতুন নিয়োগ দেবো।’
‘কারণ প্রতিনিয়ত ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে আমার ওখানে দেবো, কিছু ট্রেইনিং করবে, কিছু সার্ভিস দেবে, আরেক জায়গায় যাবে, এটা কোনো বিষয়ই না, এটা নিয়ে মনে হয় এতটা মাথা ঘামানোর প্রয়োজনও নাই।’
এই প্রশিক্ষণের জন্য একটি তহবিল করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, নইলে অন্য কেউ সরকারে আসলে এই উদ্যোগ তারা বন্ধ করে দেবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চালু হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়ার উদারহণ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা পেলে সবাই নৌকায় ভোট দেবে, আমাদেরকে কেউ ভোট দেবে না- এই কথাটা বলে (কমিউনিটি ক্লিনিক) বন্ধ করে দিয়েছিল।
‘এ রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেউ, এটা চিন্তাও করা যায় না। কেবল এই একটা ব্যাপারে না, আরও বহু ব্যাপারে এই রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বিএনপি-জামায়াত নিয়ে গেছে যার জন্য আমাদের অনেক খেসারতও দিতে হয়েছে।…এ কারণে পারমানেন্ট একটা সলিউশন মনে হয়… এমনভাবে করে দেয়া, যাতে আর কেউ এটা বন্ধ করতে না পারে, সেভাবে এটা করা ভালো।’
অ্যাম্বুলেন্স মেরামতেও তহবিল চান প্রধানমন্ত্রী
সরকারি টাকা বরাদ্দের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও সচেতন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্সের কোনো যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে-এমন একটি উদ্যোগ চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সের একটা চাকা যদি নষ্ট হয়, সে চাকার জন্য সরকারি টাকার আবেদন করে আনতে আনতে চার চাকাই নষ্ট হয়ে যায়, অথবা অ্যাম্বুলেন্সটা বসেই যায়।’
এই সমস্যার সমাধানটাও বাতলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স তো কিছু কামাইও করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী আনলে তো সে কিছু ভাড়াও পায়।… সেখানে আমার মনে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার, অথবা একটা ফান্ড করা দরকার যেখান থেকে যদি কখনও কিছু একটা নষ্ট হলে অথবা সামান্য একটু খারাপ হলে…’
‘একটা ফান্ড কীভাবে রাখা যেতে পারে, তাৎক্ষণিকভাবে খরচ করবে, তারপর বিল দেবে, তারপর টাকাটা পাবে।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে চিন্তা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু দিয়েই যাচ্ছি, এর আগেও চারশ-পাঁচশ অ্যাম্বুলেন্স… যখনই সরকারে আসছি, তখনই দিচ্ছি। এত তাড়াতাড়ি এগুলো তো নষ্ট হওয়ার কথা না।’
এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিলে তারা সেগুলো গ্রহণ করে না।
এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘না, ফাইনান্স মিনিস্টার কোনো কিছু আরগু করবে না, এটা নিয়ম, কিন্তু সে জন্য আমাদেরকে তো একটা বিষয় ডেভেলপ করতে হবে, আপনারা করে দিন, আমি পাস করে দেব।’
বিদেশি চিকিৎসকদের দেশে কাজ করার সুযোগ জরুরি
দেশের চিকিৎসা সেবা উন্নত করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশে কাজ করার সুযোগ তৈরির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদেরকে যদি সুযোগ দেয়া যায় বা তারা যদি এখানে এসে কিছুদিন কাজ করে যায় তাহলে আমাদের চিকিৎসকরা তাদের সঙ্গে কাজ করলে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে।’
‘তাহলে আমাদের রোগীদের আর বিদেশ যেতে হয় না, বিদেশের চিকিৎসাটা তারা এখানে বসেই পেতে পারে। সে জন্য অনেক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।’
‘কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর আগে সতর্ক থাকতে হবে’
গত কয়েক বছর ধরেই কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের অসুস্থ হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা শিশুদের প্রাণ রক্ষা করতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই কাজ করে তাদেরকে বলে দেবেন যে, কোনো শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর আগে তার পেট যেন খালি না থাকে, তাদেরকে যেন খাবার দেয়া হয়।’
‘অনেক সময় কৃমির ওষুধ খেলে হয় বমি হয় বা অন্য কোনো অসুবিধা হয়। সেটা হয় যদি খালি পেটে সে ওষুধ খায়। তাদেরকে সব সময় ভরা পেটে খাওয়ার ব্যবস্থাটা করা উচিত।’
‘আপনারা ওষুধ খাওয়ানোর পরে নাস্তাটা দেন। এটা আগে দিলেই তো ভালো হয়, তাহলে ঝামেলাটা আর হয় না।’
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন