এই যুগের শাহজাহান তিনি!

ভালোবাসার অমর কীর্তি আগ্রার তাজমহল। ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রী মমতাজের প্রতি প্রেমের স্বীকৃতিস্বরূপ এই নিদর্শন নির্মাণ করে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। এবার ২০২১ সালে এসে প্রেমের সেই বিখ্যাত স্মৃতিস্তম্ভের আদলে একটি বাড়ি তৈরি করে স্ত্রীকে উপহার দিলেন এক ভারতীয় নাগরিক।

বলছি এ যুগের এক শাহজাহানের কথা, যার নাম আনন্দপ্রকাশ চৌকসিয়া। তার বাড়ি মধ্য প্রদেশের বুরহানপুরে। সেখানেই তাজমহলের আদলে স্ত্রীর জন্য ভালোবাসার এই প্রাসাদ গড়েছেন একবিংশ শতাব্দীর এই শাহজাহান।

ভারতীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, তিন বছর আগে আনন্দপ্রকাশ ও তার স্ত্রী তাজমহল দেখতে গিয়েছিলেন। তখনই মনে মনে নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শনস্বরূপ নকল আরেকটি তাজমহল বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। ফিরে এসে তাজমহলের স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন আর যোগাযোগ করেন নির্মাণশিল্পীদের সঙ্গে।

তবে সেকাল আর একালের এই তাজমহলের মধ্যে বিস্তর একটি পার্থক্য রয়েছে। মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার মৃত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে তাজমহল বানালেও, আনন্দপ্রকাশের তাজমহল কোনও সমাধি সৌধ নয়। বরং জীবিত স্ত্রী মঞ্জুশার সঙ্গে এখানেই বাস করতে চান তিনি। তবে শুধু স্ত্রী-ই নয়, বুরহানপুর শহরের জনগণও এই বাড়িতে ঘুরতে আসতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আনন্দপ্রকাশ। এমনকি আগামী দিনে তার এই বাড়িটি বুরহানপুরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে বলেও আশাবাদী তিনি।

এই বাড়িটি আমার স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার নিদর্শন। আমার বাড়িতে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে। অনেক যুগল বিয়ে করার আগে এই বাড়িতে এসে ছবি তুলছেন। আমি তাতে বাধা দিই না। কারণ, এ শহরে আমরা সবাই ঘনিষ্ঠ সম্প্রদায়। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, জানেন। আমার বাড়ি সবার জন্যই উন্মুক্ত।

৫০ একর বিস্তৃত জমিতে ৯০ বর্গমিটার প্রশস্ত এই বাড়িটির মূল কাঠামো ৬০ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ২৯ ফুট। এতে অনেক মিনারের মতো স্থাপনা রয়েছে। বাড়িটির দু’টি তলায় দু’টি করে শোবার ঘর। এছাড়াও আছে রান্নাঘর, গ্রন্থাগার ও যোগাসনের ঘর। এর ড্রয়িংরুমে আছে দৃষ্টিনন্দন সাজের মার্বেল পাথরের স্তম্ভ। বিভিন্ন জায়গায় আছে বক্রাকার সিঁড়িপথ এবং স্বর্ণালী সিলিং। আসল তাজমহলের মতোই অন্ধকারে এই নকল তাজমহলও দ্যুতি ছড়াবে। কারণ বাড়িটির নির্মাতা আলোর ব্যবহারে এনেছেন অভিনবত্ব।

অবাক করার বিষয় হলো বিশাল এ চত্বরে একটি হাসপাতালও আছে। সম্রাট শাহজাহানের তাজমহলের আদলে এই বাড়িটি বানাতে সময় লেগেছে তিন বছর এবং খরচ হয়েছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন রূপি। এর আগে উত্তর প্রদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ২০১৩ সালে স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাজমহলের প্রতিকৃতি বানিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।