এনআইডি কার্ডে লেখা ‘আঙ্গুলের ছাপ নেই’!

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জন্য আঙ্গুলের ছাপ দিতে গিয়ে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার অমল সরকার পড়েন এক বিড়ম্বনায়। বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন আঙ্গুলের ছাপ দিতে। আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা বুঝতে পারছিলেন না, ঠিক কি করবেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এনআইডি কার্ডের লেখা হয় ‘আঙ্গুলের ছাপ নেই’।

মোবাইল সিম কার্ডের জন্য আঙ্গুলের ছাপ দেওয়া যখন বাধ্যতামূলক করা হয়, তখনও বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। এভাবে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাকে।

কেবল অমল সরকার নয়, তার পরিবারের ছয় সদস্য হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়ছেন। একই সমস্যা ছিল অমল সরকারের বাবা এবং দাদারও। তারা দু’জনই ছিলেন তাদের বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। অমলের দুই ভাইও একই সমস্যা নিয়ে জন্মেছেন। ‘অ্যাডারমাটোগ্লিফিয়া’ নামে এক বিরল বংশগত সমস্যার কারণে তাদের দুই হাতের আঙ্গুলে কোনও ছাপ নেই।

অমল সরকার বলেন, এই সমস্যার কারণে পদে পদে অপদস্থ হতে হচ্ছে। আঙ্গুলের ছাপ না থাকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইনি। একবার বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে বিমানবন্দরে ঝামেলায় পড়তে হয়। আমার ছেলেদেরও নিয়মিত ঝামেলার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কৃষিকাজসহ কোনো ভারি কাজ করলে হাতের চামড়া খুব সহজেই ফেটে যায়।

অমল সরকারের বড় ছেলে অপু সরকার বলেন, আঙ্গুলের ছাপের এ সমস্যা বংশগত, তাই কখনও চিকিৎসার চেষ্টা করিনি। আমার দাদারও একই সমস্যা ছিল। কিন্তু আমার দাদা মনে হয় না এটাকে কখনও সমস্যা হিসেবে দেখেছেন। মায়ের হাতে কোনও সমস্যা নেই। নিজের নামে সিম কার্ডের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন করতে না পারায় বাবা এবং ছোট ভাই এখন মায়ের নামে তোলা সিম ব্যবহার করছি।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে আমি ও বাবা স্মার্টকার্ড করেছি। আঙ্গুলের ছাপ দিতে পারিনি, তবে রেটিনা স্ক্যান করা হয়েছে।

অমল সরকারের বড় ভাই গোপেশ সরকার বলেন, প্রায় দুই বছর অপেক্ষা করার পর সম্প্রতি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি। এই পাসপোর্টের জন্য আমাকে চার থেকে পাঁচবার ঢাকায় যেতে হয়েছে, এটা বোঝানোর জন্য যে-আসলেই আমার এই সমস্যা আছে।