এলো খুশির ঈদ

১৪৪০ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। বুধবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে সংবাদ ব্রিফিং করে এ কথা জানিয়েছেন।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ফিতরের এক অর্থ ভঙ্গ করা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজার সমাপ্তি ঘটানোর আনন্দ। অর্থাৎ দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা, তারাবির নামাজ, জাকাত-ফিতরা আদায়ের পর মুসলিম উম্মাহ রোজা ভঙ্গ করে মহান আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামতের শুকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন তাই ঈদুল ফিতর। এই আনন্দ কর্মশেষে সাফল্যের আনন্দ। এই আনন্দ প্রাপ্তির আনন্দ। এই আনন্দ আল্লাহর তাকওয়া অর্জনের সাফল্যের আনন্দ। তারপরও ঈদের আনন্দ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে রূপ নেয়। তাই এই আনন্দ হয়ে ওঠে সর্বজনীন।

এক মাস টানা সিয়াম সাধনাশেষে ঈদের অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে এক অপার্থিব অনুভূতি। এ আনন্দ পরকালীন জীবনের জন্য শান্তি ও মুক্তি লাভের এক অনন্য আধ্যাত্মিক অনুভূতির। তাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান শেষে শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখামাত্রই খুশির জোয়ার বয়ে যায় প্রতিটি রোজাদারের দেহ-মনে। এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-নির্ধন ছোট-বড় সবার মধ্যে। প্রতিটি প্রাণে দোলা দেয় ঈদ আনন্দ। ঈদুল ফিতর বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও জাতীয় উৎসব। দিনটি মুসলমানদের জন্য বরকতময়ও। মানবতার মুক্তির দিশারি হজরত মুহাম্মদ সা: ঈদের প্রচলন করেন। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছেÑ মহানবী সা: বলেছেন, ‘প্রত্যেক জাতিরই উৎসবের দিন আছে। আর আমাদের উৎসব হলো ঈদ।’ হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলমানেরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করে আসছেন।

ঈদের দিন সকালে সবাই ঈদগাহে সমবেত হন। একই কাতারে দাঁড়িয়ে আদায় করেন দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ। এরপর সবাই একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন, কুশলবিনিময় করেন। একে অপরের বাড়িতে গিয়ে, সাক্ষাৎ করে ঈদ কুশলবিনিময় করেন, আপ্যায়িত হন।

ঈদুল ফিতরে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজের আগেই তা আদায় করা উত্তম। কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে না পারলে পরে আদায় করে দিতে হবে। ধনীদের সাথে সাথে গরিব-মিসকিনরাও যাতে সমানভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন সে জন্যই এ সাদকাতুল ফিতরের ব্যবস্থা। এবার রাষ্ট্রের পক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মাথাপিছু ফিতরা ধার্য করেছে সর্বনি¤œ ৭০ টাকা। পরিবারের সব সদস্যের জন্য ফিতরা আদায় করতে হয়। ফিতরার হকদার দরিদ্ররা। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে ধনবানরা জাকাত আদায় করেন। এর বড় অংশ পান সমাজের গরিব মিসকিনরা। এভাবেই ঈদ পরস্পরকে খুব কাছাকাছি এনে দেয়। সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায়। পরস্পর মিলেমিশে বাস করার শিক্ষা দিয়ে যায়।

মূলত আনন্দকে সবার সাথে উপভোগ করার মধ্যেই রয়েছে ঈদের মাহাত্ম্য। এ জন্য ধনীরা জাকাত ছাড়াও বাড়তি দান-খয়রাতও করেন। চারপাশের গরিব লোকদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এত কিছুর মধ্যেও ঈদের আনন্দ একেবারে সবার ঘরে পৌঁছায়Ñ এ দাবি করার সুযোগ নেই। কারণ মুসলিম সংখ্যগরিষ্ঠ এই সমাজে ইসলামী অনুশাসনের অনুপস্থিতিতে সমাজে ধনী-গরিবের ব্যবধান আকাশচুম্বী। ফলে এত কিছুর পরও বছরের বেশির ভাগ দিন যাদের অর্ধাহারে-অনাহারে কাটে তাদের ঘরে ঈদ উৎসবের আমেজ কতটুকু পৌঁছায় সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিষয়টিকে তার কবিতায় চিত্রায়িত করেছেন এভাবেÑ ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা/ক্ষুধায় আসে না নিদ/মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে/এসেছে কি ঈদ?’

বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত ব্যানার দিয়ে সজ্জিত করা হচ্ছে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক, মোড় ও দ্বীপগুলো। উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ভবঘুরে কেন্দ্র ও এতিমখানায়। সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিওতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। টিভি চ্যানেলগুলো ইতোমধ্যে পাঁচ থেকে সাত দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা, ঈদ ম্যাগাজিন। জাতীয় ঈদগাহে বরাবরের মতো প্রধান ঈদজামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদগাহে টাঙানো হয়েছে বৃষ্টি প্রতিরোধক ত্রিপলসহ শামিয়ানা। পাশে থাকছে নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা। ঈদগাহ ময়দানে নেয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে এক মাস ধরে। রাজধানীসহ দেশের শপিংসেন্টারগুলোতে রমজান আসার সাথে সাথেই শুরু হয় কেনাকাটা। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবার-পরিজনের জন্য ঈদের উপহার নিয়ে গ্রামমুখো হয়েছেন নগরবাসী। তবে এবার বেশ কয়েক দিন টানা ছুটি থাকার কারণে এবং কিছু কিছু সড়ক ও সেতুর উন্নয়নের কারণে পথের ভোগান্তি অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম।