এসএসসি পাস করেই এমবিবিএস, আটক ভুয়া চিকিৎসক

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মদনপুরের একতা সুপার মার্কেটে অবস্থিত মা হসপিটালস অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ মে) বিকাল ৫টার দিকে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে তাকে হাতকড়া পরায়। পিবিআই ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই ঢাকা মেট্রো সাংবাদিকদের জানিয়েছে— এমবিবিএস, সিএমইউ এবং সনোলজিস্ট ডিগ্রিপ্রাপ্ত পরিচয় দিয়ে বেড়ানো প্রতারক এই ভুয়া চিকিৎসকের নাম মাহবুব আলম ভূঁইয়া। মাধ্যমিক পাস করেই এমবিবিএস চিকিৎসক সেজে সে রোগীদের প্রতারিত করে আসছিল। তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য পিবিআই ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপারের নজরে আসে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

বিশেষ পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদের নেতৃত্বে একটি টিম মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ওই হাসপাতালে যায়। সেখানে তারা রোগী সেজে কথিত চিকিৎসক মাহবুবের কাছে যান। তাদের শারীরিক চেকআপ করে রক্তচাপ এবং ওজন মেপে ব্যবস্থাপত্রে তিনটি পরীক্ষা করতে দেয় এবং সিএমইউ এবং সনোলজিস্ট হিসেবে নিজেই আল্ট্রাসনো করে সে।

প্রতারক যুবকের সঙ্গে বিভিন্ন কথোপকথনের মাধ্যমে পিবিআই জানতে পারে সে ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সেবা প্রদানের নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এরপরই তাকে আটক করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো।

আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, সে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার সম্মানদি ইউনিয়নের দড়িকান্দি গ্রামের আব্দুল মতিন ভূঁইয়ার ছেলে। ২০০৯ সালে জেলার সোনারগাঁও থানাধীন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে।

মা হসপিটালস অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক রুহুল আমিন ও ম্যানেজার ওবায়েদ উল্লাহর লোভনীয় প্রস্তাবে নিয়োগপত্র ছাড়াই গত মার্চ থেকে এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে জরুরি বিভাগে রোগী দেখে আসছে অভিযুক্ত মাহবুব। এ ঘটনায় পিবিআই ঢাকা মেট্রোর উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোন্দকার মনিরুজ্জামান কর্তৃক বাদী হয়ে মামলা দায়েয়ের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

এর আগে সোনারগাঁও থানাধীন মোগরাপাড়া চৌরাস্তা মেডিকেয়ার ক্লিনিকে গত বছরের আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসক হিসেবে রোগী দেখেছে বলেও জানায় মাহবুব। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী— নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর জেনারেল হাসপাতাল, সোনারগাঁও জেনারেল হাসপাতালসহ আরও বেশকিছু হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের যোগসাজশে কিছু ভুয়া চিকিৎসক রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছে।

পিবিআই আরও জানতে পারে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক নিবন্ধনপ্রাপ্ত এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা তাদের ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন প্যাড ও সাইনবোর্ডে রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখছেন না। এ সুযোগে ভুয়া চিকিৎসকরা চিকিৎসার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা কম টাকায় ভুয়া চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের কারণে ভুক্তভোগী পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।