কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

বাজারে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় বেশি দামের আশায় অনেক কৃষক আগাম জাতের এই পেঁয়াজটি আগেভাগেই তুলে বাজারে সরবরাহ করছেন। এছাড়া, সরকার যেভাবে সারা দেশে কঠোর অভিযান শুরু করেছে তাতে অসৎ শ্রেণির ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে গুদামে পেঁয়াজ রাখতে সাহস করছেন না।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, গতকাল সোমবার রাজধানীতে নতুন পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৮০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে আরও বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে গত রবিবারের বাজারদরের চেয়ে তা বেশ কম। গত শুক্রবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে সেদিন থেকেই পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২১০ টাকায় উঠে যায়। যা তার আগের দিনের চেয়ে কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেশি।

হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে আবারও আমদানির খবরে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। গতকাল দিনাজপুরের হিলিতে কেজিতে অন্তত ২০ টাকা করে কমেছে। বর্তমানে বন্দরের মোকামে ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ১২০ টাকায় এবং দেশি শুকনো পেঁয়াজ ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল হিলি স্থলবন্দরের মোকাম ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বিক্রেতাদের যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আমদানিকারকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, এখন থেকে চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে যেসব গুদাম রয়েছে, সব গোডাউনের তথ্য নেওয়া হবে। রসিদ ছাড়া কোনো গুদামে মালামাল পাওয়া গেলে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে জব্দ করা হবে। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক অহীদ সিরাজ স্বপন বলেন, দু-এক জন ব্যবসায়ীর জন্য পুরো ব্যবসায়ীসমাজ কলঙ্কিত হতে পারে না। তাদের অপকর্মের দায় আমরা নেব না।

রাজশাহী থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গতকাল রাজশাহীতে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে তিন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে ভোক্তা অধিদপ্তর। নগরীর সাহেববাজার কাঁচাবাজারে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় তিন ব্যবসায়ীকে মোট ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) সংবাদদাতা জানান, জীবননগরে দুই দিনের ব্যবধানে নতুন পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি কমেছে ৫০ টাকা। যা ছিল ১৭০ টাকা। গতকাল সোমবার তা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে। বাজারের খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, নতুন পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজিতে ৫০ টাকা কমলেও ভারতীয় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কমেনি।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার ভোমরায় ভারতীয় পেঁয়াজ মজুদের দায়ে গতকাল চার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সাতক্ষীরার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, পেঁয়াজ মজুতের সত্যতা পেয়ে আঁখি ট্রেডার্সের মালিক আমির হোসেনকে ২০ হাজার টাকা, এস আর এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মারুফ হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা, আজাদ ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার তাফসিরুল আলমকে ৩০ হাজার টাকা ও রাফসান ট্রেডার্সের ম্যানেজার দীপক কুমার সরকারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সুজানগর (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, সুজানগরের হাটবাজারে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে মুড়িকাটা বা আগাম আবাদ করা পেঁয়াজের দাম কমেছে মণ প্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এতে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রবিবার উপজেলার অধিকাংশ হাটবাজারে প্রতি মণ মুড়িকাটা বা আগাম আবাদ করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দরে। এ সময় হাটবাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে। অথচ মাত্র এক দিনের ব্যবধানে গতকাল সোমবার প্রতি মণ পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়ে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে। এ হিসেবে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমেছে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

সিলেট অফিস জানায়, গতকাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান বলেন, সিলেটের পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে তদারকি অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক দামে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।