মামুন হত্যা মামলার রায় : ৭ আসামির যাবজ্জীবন

কর্ণফুলীতে প্রশংসায় ভাসছেন ফেনী দাগনভূঞা থানার ওসি হাসান ইমাম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগকর্মী মামুনুর রশীদ মামুন প্রকাশ সাগর (২৬) হত্যা মামলায় সাত জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। যা আলাদা আলাদা ভাবে দন্ডিত হবে। অন্যদিকে, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ১ বছর কারাদন্ড ভোগ করবেন।

বুধবার (২০ এপ্রিল) সকালে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ রায় দেয়।

চাঞ্চল্যকর এই মামলাটি ফেনী দাগনভূঞা থানার বর্তমান ওসি মোঃ হাসান ইমাম কর্ণফুলী থানায় কর্মরত থাকাকালে তদন্ত করে মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করে কোর্টে চার্জসীট প্রদান করেন।

অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। এই মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন আইও। তাঁর সাত দিনের ধারাবাহিক জেরায় মুখে মুখ খোলতে বাধ্য হন আসামিরা। ফলে, সহজেই হত্যা মামলার মূল মোটিভ বেরিয়ে আসে।

পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ সাত জনকে আসামি করে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। তথ্যমতে, এ মামলার চার্জসীট প্রদান করেন ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। চার্জ গঠন হয় ২০২১ সালের ০৫ জানুয়ারি। মোট সাক্ষী ছিলেন ২৭ জন। সাক্ষী প্রদান করে ১৮ জন।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার তৎকালিন পুলিশ পরিদর্শক বর্তমানে ফেনী দাগনভূঞা থানার ওসি মোঃ হাসান ইমাম ‘মামুন হত্যা মামলা ‘র সব আসামিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন।

যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন, কর্ণফুলীর শাহমীরপুর গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে মোঃ আজম (২৬), একই গ্রামের মৃত নুরুচ্ছাফা প্রকাশ সাহাব মিয়ার ছেলে মোঃ ফারুক প্রকাশ আশিক (২৬), আবু তাহের এর ছেলে আলী আজগর প্রকাশ হৃদয় (২০), মকুবল আহম্মদের ছেলে মোঃ ওমর উদ্দীন (২৪), মোঃ সৈয়দ এর ছেলে শওকত হোসেন প্রকাশ শাহনুর (২২), এস এম আশরাফুল আলম সুমন (২৫) ও মোঃ পারভেজ ২৭)। এরা দুজন পলাতক রয়েছে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর সাজা কার্যকর হবে ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী আয়ুব খাঁন ও সহকর্মী সিগমা চৌধুরী। যার দ্রুত বিচার মামলা নং-৫/২০ ও কর্ণফুলী থানার মামলা নং-৭২ (৯) ১৮, ধারা ৩০২ দন্ডবিধি। এ মামলায় ঘটনার বিস্তারিক স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন আসামি মোঃ ফারুক প্রকাশ আশিক ও আলী আজগর প্রকাশ হৃদয়।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, আজ থেকে চার বছর আগে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের জমাদর পাড়ায় নিহতের বাড়ির অদুরে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্রের কোপে ছাত্রলীগকর্মী মামুনুর রশীদ মামুনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় মামুনের সঙ্গে থাকা আরেক ছাত্রলীগ কর্মী আজিজ গুরুতর আহত হন। ঘটনার এক দিন পর নিহত মামুনের বড় ভাই মোহাম্মদ ইয়াসিন বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

সরকার পক্ষের আইনজীবী আয়ুব খাঁন বলেন, মামলায় গ্রেফতার আসামীদের জবানবন্দি ও স্বাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দোষীদের দণ্ডের আদেশ দেন।

নিহত মামুনের বড় ভাই মামলার বাদি মোঃ ইয়াছিন বলেন, আদালত সব কিছু বিবেচনা করে এ রায় প্রদান করেছেন। তাতে আমরা অসন্তুষ্ট নয়। হয়তো দুই তিন জনের যদি ফাঁসির রায় হতো স্বস্তি পেতাম। তবে আমাদের পরিবারে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা কিছুটা হলেও এখন রায় হওয়ায় কমেছে।