খাগড়াছড়িতে করোনায় নারীর মৃত্যু, লকডাউনে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় জামিনা খাতুন (৮০) নামে এক নারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

বুধবার (৭ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ভুইয়াপাড়ার বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত জামিনা খাতুন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভুইয়াপাড়া এলাকার মৃত নুর মিয়া সর্দারের স্ত্রী।

তার বড় মেয়ের জামাতা মো: আব্দুল মান্নান (মনু লিডার) তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মৃতের ছেলে মো: জয়নাল আবেদীন জানান, ‘গত শনিবার (৩ জুলাই) জামিনা খাতুনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর পরপরই ওই নারী খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সকালের দিকে তাকে মাটিরাঙ্গার নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’

এদিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের তত্তাবধানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নতুনপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ.দা) মিজ ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই নারী মারা যাওয়ার পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

মৃত নারীর পরিবারের সদস্যদের করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়ে তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

অপরদিকে খাগড়াছড়িতে করোনা শনাক্তের হার দিন দিন রেকর্ড করে চলেছে। বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাড়ছে আক্রান্ত

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ‘গত ২৪ঘন্টায় ৯৭জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৪৩জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৪.৩৩%। এর আগে মঙ্গলবার খাগড়াছড়িতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৫.৮৭শতাংশ। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সদরে-১৭জন, মাটিরাঙায়-১৭জন, মানিকছড়ি-০২ জন, দীঘিনালায়-০৫ এবং পানছড়িতে-০২জন। চলতি মাসে মোট করোনা পরীক্ষা ৬৭৭জন। তার মধ্যে পজিটিভ ২৪৯জন। মোট মৃত্যু ২জন। শনাক্তের হার ১৬.৪৫%। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩৬জন। অদ্যাবদি মোট করোনা পরীক্ষা ৮৫৭৩ জন। এর মধ্যে সনাক্ত ১৪০৯ জন। জুন মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২শ ৯৬জন।

অন্যদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্ন আয়ের মানুষকে গ্রাস করতে চলেছে করোনা, বাড়ছে আক্রান্ত সংখ্যা। জেলা সদরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ শফিকুল ইসলাম। পেশায় ইজিবাইক(টমটম) চালক। বুধবার (৭ জুলাই) সকালে যাত্রী নিয়ে শহরের শাপলা চত্বর হয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের বাঁধার মুখে পড়েন। নিষেধাজ্ঞা থাকার পর কেনো ইজিবাইক চালাচ্ছেন পুলিশের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাড়ি না চালাইলে ঘরে খাবার নিতে পারুম না। এমন উত্তর পেয়ে পুলিশ তেমন কিছু বলতে না পারলেও ফের বের না করার শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

লকডাউনে বিপাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত কঠোর ‘লকডাউনের’ সপ্তম দিনে সড়কে বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা। গত কয়েকদিনের তুলনায় এই দিন ইজিবাইক, রিকশা বেশি চলতে দেখা গেছে। জুম চাষিরা দূর থেকে হেঁটে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এনে বিক্রি করছেন। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে প্রশাসনের কঠোর নজড়দারী থাকলেও অলিগলিতে ছিল উপেক্ষিত। এতদিন অলিগলিতে মানুষের চলাচল থাকলেও মূল সড়ক ছিল ফাঁকা। তবে এখন অনেকটা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন।

এছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী বিভিন্ন পিকআপের সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। কৌশলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন যানবাহন যাত্রী পরিবহন করছে। এখনো দোকান পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিং মল বন্ধ রয়েছে। জেলার আভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ রশিদ জানান, সবার বাস্তবতায় আমরা বুঝি। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানলেতো পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে যাবে। তাই আমরা মানুষকে বুঝিয়ে বাড়ি ফেরানোর চেষ্টা করছি।

গত ২৪ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরো ৪৩জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি মাসে মোট ২৪৯জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সবমিলেয়ে শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ৪০৯জন। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আট জনের এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩৯জনের মৃত্যু হয়েছে।

খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন নুপুর কান্তি বিশ্বাস জানান, জেলা সদরের পাশাপাশি কয়েকটি উপজেলায় সংক্রমণের হার বাড়ছে। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ৩৬জন ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে আক্রান্ত ১৮জন এবং উপসর্গ নিয়ে ১৮জন। পুরো জেলায় ৯৫টি করোনা বেড প্রস্তুুত রাখা হয়েছে। লক্ষণ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষার অনুরোধ জানান তিনি।