ওয়াদুদ ভ্ইূয়া’র বাড়ি ভাংচুরের প্রতিবাদে

খাগড়াছড়িতে বিএনপির সড়ক অবরোধ

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় গডফাদার খ্যাত ত্রাস সুষ্টিকারী, বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়াকে হত্যা চেষ্টা, গাড়ি-বাড়ি ভাংচুর ও পুলিশ মামলা গ্রহণ না করার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ২৪ঘন্টার অবরোধ ঢিলেঢালা শান্তিপুর্ন ভাবে চলছে।

মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল ৬টা থেকে আগামীকাল ৮ই জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত এ অবরোধ চলবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট খাগড়াছড়ি জেলা শাখা কর্তৃক এ অবরোধ ডাকা হয়। ভোর ৬টা থেকে হরতাল শুরু হলেও শহরের রাস্তায় বেশ কয়েকটি স্থান ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের তৎপরতা তেমন একটা দেখা যায় নি। তবে দফায় দফায় পুলিশের অগোচরে কবর স্থানস্থ খাগড়াছড়ি দাখিল মাদ্রাসা গেট সংলগ্ন প্রধান সড়কে টায়ার জালিয়ে অবরোধকারীরা আতংক সৃষ্টি করা হয়েছে। পরে পুলিশ এসে দাওয়া করে আগুন নিভিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়।

বিপাকে পড়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম-নওগাসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। অনেকে রাস্তার পাশে দলবেঁধে বসে মোবাইলে গেইমস খেলে অলস ও বিরক্তিকর সময় পার করছেন। অনেকে আবার রাস্তার পাশে বসে বসে বন্ধুদের কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।

সকালের দিকে জেলা শহরের মহাজন পাড়া এলাকায় প্রধান সড়কে বিএনপির সমর্থকেরা টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের ডাল ফেলে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাৎক্ষণিক পুলিশ সেখানে গেলে অবরোধ সমর্থকেরা পালিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আগুন নিভিয়ে, গাছের ডাল সরিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়।

এ অবরোধে সকালে জেলা শহরের স্বনির্ভর এলাকা, বাস স্টেশন, চেঙ্গী স্কোয়ার বেশ কিছু স্থানে পাবলিক বাস অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল তেমন একটা দেখা যায় নি। তবে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কিছু সংখ্যক টমটম(অটো), ট্রাক্টর, মিনি ট্রাক ও বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার্থীদের বহন করা ছোটখাটো যানবাহনে যাতায়াত করতে দেখা যায়। এ চলমান অবরোধের মাঝেও কর্মস্থল খোলা থাকায় বের হতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষদের। পায়ে হেঁটে নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে তাদের।

বরাবরের মতই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা যায়।

এদিকে, ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো: ইসমাইল জানান, আমরা আসলেই জানতাম না, খাগড়াছড়িতে আজকে বিএনপির হরতাল ও অবরোধ আছে। আমাদেরকে কাউন্টার থেকেও বলা হয়নি রাতে গাড়িতে উঠার সময়। আজ ভোরে আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভাররা আমাদেরকে বলেন আজ অবরোধ। আমাদের গাড়ি আর কোথাও যাবেনা। এরপর থেকে আমরা বিপাকে পড়ি। আমরা এখন গাড়ি পাচ্ছিনা, আমরা এখন খুবই দুর্ভোগের মধ্যে আছি। আমাদের টিমে ৪০জনের অধিক এখন রাস্তার পাশে বসে বসে বিরক্তিকর সময় পার করতে হচ্ছে। আর আমাদের বিভিন্ন কাজকর্ম থাকার কারণে পূর্ব থেকে অফিস থেকে ৩দিনের ছুটি নিয়ে সাজেকে অবস্থান করার জন্য অগ্রিম পেমেন্ট দিয়ে হোটেল/কটেজ বুকিং করে রেখেছিলাম। যদি আমরা আজ সাজেকে যেতে না পারি, তাহলে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হবে।

আরিফ হোসেন নামে এক পর্যটক জানান, আমরা ৫জন রাতে ঢাকা থেকে সাজেকে যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়িতে আসি। ভোর ৪টায় আমরা এ শাপলা চত্বরে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নামার পরে আমরা জানতে পারি যে, আজ বিএনপির হরতাল-অবরোধ ছিল। আমরা আগে থেকে এ ব্যাপারে জানলে আমাদেরকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হতোনা। এখন আমাদেরকে কোন যানবাহন নিতে চাচ্ছেনা। আমরা এখন অনেক বিপাকে পড়েছি।

এদিকে এক সমাবেশে বিএনপি নেতারা বলেন, অবিলম্বে এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধের দাবী করে, সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের দাবিও জানান। অন্যথায় জেলা বিএনপি কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

জেলা যুবদলের সভাপতি মাহবুব আলম সবুজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া, জেলা বিএনপির সিঃ সহ সভাপতি প্রবীণ চন্দ্র চাকমা, সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম সম্পাদক অনিমেষ চাকমা রিংকু, মোশাররফ হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ হোসেন সুমন সহ প্রমুখ।

পথে পথে আওয়ামীলীগের হামলা ও বাধার উপেক্ষা করে প্রতবাদ সমাবেশ ও অবরোধ সাফল করার জন্য ধন্যবাদ জানান নেবৃন্দদের।

প্রেসবার্তায় উল্লেখ করা হয়, সড়ক অবরোধ চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে, তবে জরুরী সেবায় নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদ পত্রের গাড়ি অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়।

এদিকে খাগড়াছড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ফলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর তার এই সাফল্যে বিএনপি ও তার অনুসারীরা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত ৪জুন খাগড়াছড়ি জেলা যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের হামলা, দোকানপাট, গাড়ি ভাংচুর ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সোমবার(৬ই জুন) সকাল ১১টার দিকে জেলা, উপজেলা ও পৌর যুবলীগ এর উদ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শাপলা চত্বর ঘুরে আবার কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।মিছিলের নেতেৃত্ব দেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে.এম ইসমাইল হোসেন।

সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ৭ই জুন বিএনপি দিনব্যাপী অবরোধ ডেকেছে। আমরা এই হরতাল-অবরোধ কোনভাবে সফল হতে দেবোনা। এদেশের মানুষের জান-মাল রক্ষায় আমরা সবসময় প্রস্তুুত আছি। আমরা শান্তি-সমৃদ্ধিকে বিশ্বাস করি। যেকোন ধরনের নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। যেখানে নৈরাজ্য ও নাশকতা সৃষ্টি হবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। এ সময় বক্তারা বিএনপির সকল নৈরাজ্য প্রতিরোধে প্রস্তুুত থাকার আহŸান জানান।
এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæু চৌধুরী অপু, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সহ-সভাপতি মংক্যচিং চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: দিদারুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, এডভোকেট আশুতোষ চাকমা, দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার দে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমাসহ পৌর, উপজেলা ও বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
উল­খ্য, প্রতিবাদ সমাবেশকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গতকাল থেকে যুবলীগ ছাত্রলীগ ও পুলিশের সহযোগিতায় মানিকছড়ি, দীঘিনালায় দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে বাবুছড়া ইউনিয়ন বিএনপি সাধারন সম্পাদক শরীফুলকে মারধর করে এবং মানিকছড়ি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো: কামাল হোসেনকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করে ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার ২জন যুবদল কর্মীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে।

সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, বাড়ি ও গাড়ি ভাংচুর, নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, নেতাকর্মীদের উপর হামলা, শহরের নিরীহ ব্যবসায়ীদের দোকানে হামলা ও লুটপাটের এহেন নেক্কারজনক ঘটনায় মামলা গ্রহণ না করে উল্টো আওয়ামীলীগের মিথ্যা মামলা গ্রহণ করে এবং সোমবারের বিএনপির ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশ পন্ড করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের বাঁধা ও পুলিশী হয়রানীর প্রতিবাদে ৭ই জুন (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ঘন্টা খাগড়াছড়ি জেলায় সড়ক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি দপ্তর সম্পাদক আবু তালেব স্বাক্ষরিত এক প্রেসবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।