খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলাতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ৯টি উপজেলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত হয়েছে। রোববার(২৬শে মার্চ) সকালে সর্বস্তরের মানুষ জেলা শহরের চেঙ্গীস্কয়ার স্মৃতিস্তম্ভে মহান স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদানকারী শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স’র চেয়ারম্যান(প্রতিমন্ত্রী সমমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা এমপি,খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দীন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæু চৌধুরী অপু, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, মং সার্কেল চীফ সাচিংপ্রু চৌধুরীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা।
সকাল সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে এ দিবসটির উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের কুচকাওায়াজ,স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক ডিসপ্লে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এ কুচকাওায়াজ,স্বাধীনতা যুদ্ধ বিষয়ক ডিসপ্লে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে র্যালী শোভাযাত্রায় দিবসটি পালন করেছে।
আ.লীগের শোভাযাত্রা: যথাযথ মর্যাদায় ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করেছে আওয়ামী লীগ। দিবসটি উপলক্ষে সকালে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার সংলগ্ন স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, সাবেক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সিনিয়র সহ-সভাপতি রনবিক্রম ত্রিপুরা, কল্যাণ মিত্র বড়ুয়াসহ জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
মাটিরাঙ্গায় আওয়ামীলীগের স্বাধীনতা দিবস: জেলার মাটিরাঙ্গায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন। রোববার(২৬শে মার্চ) সকালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যে দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা ও পৌর আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী সংগঠনের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা সোপানে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিরন জয় ত্রিপুরার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা, পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন লিটন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: তছলিম উদ্দিন রবেল প্রমুখ। এ সময় মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো: ওয়ালীউল্ল্যাহ, মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ ফরাজী, মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলীসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মানিকছড়িতে স্বাধীনতা দিবস: মহান স্বাধীনতা দিবসে সূর্যোদয়ের পর শহিদ বেদিতে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ, ক্রীড়ানুষ্ঠান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচছা বরণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
রোববার (২৬শে মার্চ) সকাল ৭টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদীন ও জেলা পরিষদ সদস্য মো: মাঈন উদ্দীন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো: আনচারুল করিম এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: শফিউল আলম চৌধুরীসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষা -শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি শহিদ বেদিতে ধারাবাহিকভাবে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত ও দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা মডেল মসজিদের পেশ ইমাম মাও. মো: আহমেদুল হক।
সকাল ৮টায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ ও শিক্ষার্থীদের ক্রীড়ানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরে জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লাল গোলাপের শুভেচছায় সিক্ত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলী হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কমান্ডার মো: শফিউল আলম চৌধুরী রণাঙ্গনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বলেন, জাতির পিতা ও স্বাধীনতার পথপ্রদর্শক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এখনো যারা মেনে নিতে কষ্ট হয়। লাল-সবুজের অর্জিত পতাকার দেশে তাদের থাকার অধিকার নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) রক্তিম চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো: জয়নাল আবেদীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংর্বধনা কমিটির আহবায়ক ও কৃষি কর্মকর্তা মো: হাসিনুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রতন খীসা, ওসি তদন্ত মো: আজগর হোসেনসহ সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সুধীজন।
পানছড়িতে স্বাধীনতা দিবস: পানছড়িতে নানান আয়োজনে মহান স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। রোববার(২৬শে মার্চ) দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও শহিদ মিনারে পুস্পমাল্য অর্পণ করে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: আব্দুল মোমিন ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেবের নেতৃত্বে পুস্পমাল্য অর্পণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দিনের শুরুতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ, উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্র দেব চাকমা ও পানছড়ি থানার ওসি মো: হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন।
পানছড়ি উপজেলার সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং পানছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা শহীদ মিনারে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন। সকাল ১০টায় শিশু-কিশোরদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন খেলাধুলা। সকাল ১১টায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
রামগড়ে নানা আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস: খাগড়াছড়ির রামগড়ে নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা দিবস। এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। রোববার(২৬শে মার্চ) সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতা আফরিনের সভাপতিত্বে পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সহকারী কমিশনার(ভূমি) মানস চন্দ্র দাস, থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমদারঞ্জন ত্রিপুরা। অন্যান্যের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মোস্তফা, প্রমোদ বিহারী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগের ব্যবস্থাপনায় পাঁচটি বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের ট্যাব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন জটিল ও দূরারোগ্য রোগের এককালীন অনুদান কর্মসূচী থেকে রামগড় পৌরসভার ক্যান্সার, কিডনি, স্ট্রোকে প্যারালাইজড আক্রান্তদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা উম্রাচিং চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এর আগে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রামগড় লেকপাড়ে বিজয় ভাস্কর্যের প্রাঙ্গণে ৩১বার তোপধ্বনি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
পরে বিজয় ভাস্কর্যের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, রামগড় পৌরসভা, উপজেলা আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সন্তান কমান্ড, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের দুই গ্রুপ(বিএনপি), পুলিশ রামগড় সার্কেল, রামগড় থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রামগড় প্রেসক্লাবসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক সে”ছাসেবী সংগঠন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পুলিশ, আনসার ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন