খালাস পেলেও মিলছে না মুক্তি, রায়ের অপেক্ষায় ৬ মাস

নেত্রকোনায় শিশু ফয়সাল হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে খালাস দেওয়া হয় চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদন শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে আসামিকে দেয়া হাইকোর্টের খালাস বহাল থাকে আপিল বিভাগের চেম্বারেও।

এরপর থেকে কারাগারে মুক্তির প্রহর গুনতে গুনতে ৬ মাস পেরিয়ে গেছে খালাস পাওয়া খালেদ মোশারফের। তবুও মিলছে না মুক্তি।

নিয়ম অনুযায়ী, আদালত থেকে রায়ের কপি কারাগারে যাওয়ার পরই কারা কর্তৃপক্ষ আসামির মুক্তির ব্যবস্থা করবে। খালেদ মোশারফ এবং তার পরিবারের অপেক্ষা এখন কবে বের হবে আদালতের রায়।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে রায় ঘোষণা করা হলো। আর এখন সেপ্টেম্বর মাস চলছে, রায় বের হওয়ার জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? উচ্চ আদালতের আইনজ্ঞদের প্রতি এমন প্রশ্ন খালেদের স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু রায় কবে প্রকাশ হবে তা বলতে পারছেন না কেউই।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ওবায়দুল হক ফয়সাল (৭) নামে এক শিশু ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়। পরদিন লাশ মেলে মোশারফের বাড়ির পাশের পুকুরে।
এ ঘটনায় ফয়সালের বাবা বাদী হয়ে খালেদ মোশারফসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ মামলায় ২০১২ সালে খালেদ মোশারফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অপর আসামিকে খালাস দেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক দেওয়ান মো. সফিউল্লাহ। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে বিনাশ্রমে তার এক বছর কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিপক্ষ।

খালেদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজা থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি রাজিক- আল- জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মামলা থেকে খালেদকে খালাস দেন।

এরপর হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড নাহিদ সুলতানা। রাষ্ট্রপক্ষের করা ওই আপিল আবেদন শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।

এ রায়ে খালাস পাওয়া খালেদ মোশারফের পরিবার আত্মীয়-স্বজন খুশি হলেও এখন পর্যন্ত রায় প্রকাশ না হওয়াই তাদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। রায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কোর্টে ধর্না দিচ্ছেন তারা। আইনজীবী বেঞ্চ অফিসার ও গণমাধ্যমসহ সবার কাছে তাদের প্রশ্ন, রায় ঘোষণা করার কত দিন পর তা প্রকাশ করা হয়?

এ বিষয়ে মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, একজন নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার পরও মুক্তি না পাওয়া খুবই দুঃখজনক এবং অমানবিক।

মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, যেহেতু এসব রায় প্রকাশ হতে একটু দেরি হয়, তাই রায়ের পর এ বিষয়ে মামলার আইনজীবী সংক্ষিপ্ত রায়ের (শর্ট জাজমেন্ট) জন্য আবেদন করতে পারতেন। আইনজীবী আদালতকে বলতে পারতেন দেরি না করার জন্য।