খালেদাকে জেল কোড মেনেই রাখা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেল কোড মেনেই কারাগারে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন, তিনি (খালেদা জিয়া) সাবেক প্রধানমন্ত্রী। জেল কোড অনুযায়ী যেটা নিয়ম, সেভাবেই তাকে রাখা হবে। আমাদের কারা অধিদফতর সব সময়ই প্রস্তুত থাকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য। আর আমরা রায়ের আগে এখন কিছুই বলতে পারি না।’

তিনি বলেন, ‘কোর্টই বলতে পারে কাল কি হবে? কোর্টে যেভাবে আদেশ হয়, আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিব। বিচার শুরু হয়েছে, রায় হবে এটা স্বাভাবিক। আর কাল কি রায় হবে, সেটা আমাদের জানা নেই। বিচারের রায় হলে আমাদের প্রতি যে নির্দেশনা আসে সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব, এটাই স্বাভাবিক। রায়ের বিষয়টি নির্ভর করে বিচারকের ওপর। কোর্ট কি ডিসিশান দেয় তার পরিপ্রেক্ষিত আমাদের যে করণীয় আমরা সেটা করব।’

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আপনারা বলেছেন রায়ের দিনে আইনশৃঙ্খলার কোনো বিঘ্ন ঘটবে কিনা? দেখুন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময়ই তৈরি থাকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। আমি আপনাদের কাছে স্পষ্ট করে বলে দিতে পারি, এদেশের জনগণ কোনো দিনই বিশৃঙ্খলা ও জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না।’

তিনি বলেন, ‘২০১৩ ও ২০১৪ সালে আপনারা দেখেছেন। সে সময় জ্বালাও-পোড়াও করে জঙ্গিবাদের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, তা আমাদের জনগণ প্রতিহত করেছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ, পেশাদার ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে তারা সক্ষম। আমরা বলতে পারি কেউ যদি নাশকতা করতে চায়, ভাঙচুর বা জ্বালা- পোড়াও করতে চায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় বা মানুষকে জিম্মি করতে চায় এমনকি রাস্তাঘাট বন্ধ করতে চায় পুলিশ সেটা প্রতিহত করবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের রয়েছে। আমরা জনগণের প্রতি বলতে চাই- নাশকতামূলক কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে দেয়া হবে না।’

ঢাকার আশপাশের প্রবেশ মুখে পুলিশের ব্যাপক সতর্ক অবস্থান কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এ রায়কে ঘিরে কেউ যেন লাটিসোটা বা অন্য কোনো জিনিস নিয়ে ঢাকায় যেন ঢুকতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।’

রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক ধড়পাকড়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত ৩০ জানুয়ারি কি ঘটনাটা ঘটেছে। ওইদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালত থেকে যাওয়ার সময় তার গাড়ি অতি ধীরে যাচ্ছিল। তার সম্মুখভাগে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রিজন ভ্যানে আক্রমণ হলো। বহরে যারা ছিল তারা পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এটা বিগত সময়ে পিটিয়ে পুলিশকে হত্যার দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সেখানকার ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আপনারা যদি দেখতে চান আমি দেখিয়ে দিতে পারি। এ ভিডিও ফুটেজগুলো দেখে তাদের সনাক্ত করার চেষ্টা করছি। যে যেখানেই অবস্থান করছে, আমরা তাদের ধরছি। এগুলো আপনাদের কাছেও আছে।’

এ সময় ওই দিনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিকদের দেখান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সেখানে শত শত মানুষ এ কাজে সহযোগিতা করেছে। তাদের আমরা একজন একজন করে ধরে আনার চেষ্টা করছি। এ পর্যন্ত এমন অনেককেই আমরা ধরতে সক্ষম হয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় চারজনের আমরা পরিচয় পেয়েছি। তারা হলেন- মামুম খান, পিতা, মাছুম বিল্লাহ, নলছিটির ঝালকাঠি জেলায় তার বাড়ি। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। রুহুল আমিন, পিতা আব্দুল কাদের, হাজিগঞ্জ, চাঁদপুরের বাসিন্দা তিনি। ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। হারুনুর রশিদ, পিতা আব্দুল মালেক, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাংগাঠনিক সম্পাদক তিনি। এভাবে জানা গেছে তারা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন।’

বিএনপি নেতা হাবিব-উন নবী খান সোহেলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও খোঁজ নিয়েছি। আমাদের র‌্যাব বা পুলিশ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করেনি। তিনি নিজেই আত্মগোপন করেছেন। এটা তার নিজের একটি নতুন কৌশল।’