গরু বিক্রি বন্ধ: ভারতের বড় দুধের বাজারে ধস

জবাই ও গোস্তের জন্য গরু বাজারে নিয়ে বিক্রির ওপর কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পশ্চিম বঙ্গ সরকারের বিরোধ যখন তুঙ্গে তখন আরেকটি দুঃসংবাদ হলো ভারতের বাজারগুলোতে দুধের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ উত্তরপ্রদেশসহ অন্যান্য এলাকা থেকে গরু মহিষ কিনে আনা কঠিন হয়ে গেছে। এর গুরুতর প্রভাব পড়েছে সবচেয় বড় দুধের বাজারে।

গো-মাংস নিয়ে বিরোধ, গো-রক্ষকদের তৎপরতা, পুলিশের কঠোর আচরণ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ, সবমিলিয়ে কলকাতার গণেষ তালকিস এলাকায় ৭৫ বছরের পুরানো দেশের সবচেয়ে বড় দুধের বাজারের অবস্থা গুরুতর। এই বাজারে দেড়শ’র বেশি ব্যবসায়ী, ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতা রয়েছে। এখানে প্রতিদিন দেড় লাখ লিটার দুধের কেনাবেচা হয়। উৎসবের মওসুমে দুধের প্রতিদিনের সরবরাহ তিন লাখ লিটার পর্যন্ত উন্নীত হয়। গো-মাংস নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর এই সরবরাহ দৈনিক ৫৫ হাজার লিটারে নেমে এসেছে।

জোরাসাঁকো দুগ্ধ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রাজেশ সিনহা গণমাধ্যমকে বলেন, উত্তর প্রদেশে কেউ বাজারে নিয়ে গরু বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে। সেগুলো কিনে বাজার থেকে নিয়ে যাওয়াও খুবই কঠিন। আর পরিবহনতো এক প্রকার অসম্ভব। গো-রক্ষক থেকে পুলিশ সবাই গরু ছিনিয়ে নিচ্ছে। গরু কি জবাই না দুধের জন্য কেনা হচ্ছে তা তারা দেখছে না। আমাদের প্রধান গো-বাজার ইউপি ও দিলদারনগর। গত দুই মাস ধরে এই বাজার বন্ধ রয়েছে।

সিনহা আরো জানান, কলকাতার দুধের বাজারটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড়। দুধের জন্য গরু সংগ্রহের সমস্যাটি প্রায় এক বছর আগে শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। আগে প্রতিদিন এই বাজারে দেড় লাখ লিটার দুধের সরবরাহ ছিলো। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এক লিটার দুধের দাম যেখানে ৫০-৫৫ রুপি ছিলে এখন তা ৭০-৮০ রুপিতে দাঁড়িয়েছে।

দুধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশ ঘোষাল। তারা উত্তর প্রদেশ থেকে দুধের গাভী কিনে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আসেন। কলকাতার আশপাশের জেলাগুলোতে এসব গাভী প্রতিপালন করা হয়। জেলাগুলোর মধ্যে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা উল্লেখযোগ্য। সাত-আট মাস পর গাভীগুলো দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়। এরপর এগুলো দালালদের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। তাই দুধের উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য প্রতি মাসেই নতুন গরু কিনে আনার প্রয়োজন হয়।

ইউপি, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে গো-রক্ষকদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পশ্চিম বঙ্গে গরু প্রবেশ সংখ্যা অনেক কমে গেছে।