গাইবান্ধায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হলো এসকেএসের কর্মীরা

প্রতিনিধি সর্বজনীন পেনশন স্কিম- এ যুক্ত হলো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। এসকেএস- এর কর্মীদের অন্তর্ভুক্তি এবং অংশীজনের মাঝে সচতনতা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম- এ আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংযুক্তি অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) এসকেএস ইন্ এ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসকেএস-এর কর্মীদের পেনশন স্কীম- এ অন্তর্ভুক্তি উদ্বোধন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন বলেন, এসকেএস ফাউন্ডেশন সরকারের একটি সহযোগি সংগঠন হিসেবে নাগরিক জীবনমান সুরক্ষা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে। কাজের অংশ মতবিনিময় সভান্তে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে কর্মীদের স্ব-স্ব নামে সংস্থা হতে প্রদেয় অর্থ প্রদান করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি চুড়ান্ত করা হলো। একই সাথে সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ঠ ক্ষুপদ্রঋণ কর্মসূচির সকল অংশীজনদের কে এই পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করতে জোর প্রচারনা ও উৎসাহিত করার কাজটি ও আমরা শুরু করলাম। তিনি সংস্থার এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ সকলের নিকট প্রত্যাশা করেন।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. ফসিউল্লাহ্, এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ), সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন কবিরুল ইজদানী খান, নির্বাহী চেয়ারম্যান, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. এবিএম আবু হানিফ, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), রংপুর এবং সুশান্ত কুমার মাহাতো, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি, শিক্ষা, উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ)। সভাপতিত্ব করেন মুর্শেদ আলম সরকার, সভাপতি-এসকেএস ফাউন্ডেশন, নির্বাহী পরিচালক-পপি এবং চেয়ারম্যান- ক্রেডিট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (সিডিএফ)। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাসেল আহম্মেদ লিটন, নির্বাহী প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা এসকেএস ফাউন্ডেশন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. ফসিউল্লাহ্ বলেন, দেশের কেউ পিছিয়ে থাকবে না, সবাই এগিয়ে যাবে। এইজন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম। এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন, সেখানে মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলা হয়েছ । ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী ও সমৃদ্ধ উন্নত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারীভাবে একটি সুসংগঠিত সামাজিক সুরক্ষা কাঠামো বিনির্মান করা হচ্ছে। দেশের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠানের ২ লাখ কর্মচারী এবং ৪ কোটি মানুষ রয়েছে। যারা সকলেই আগামী দিনে এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে বলে আমরা মনে করি। বিশাল এই নেটওয়ার্ক এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি সকলকেই এই কর্মসূচির সাথে যুক্ত হতে অনুরোধ জানান।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত উপস্থাপনায় সম্মাননীয় অতিথি কবিরুল ইজদানী খান বলেন- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনয়নে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা প্রদান করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ প্রণীত হয় যার অধীনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখ সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষনা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমূখী পদক্ষেপ, যা সকল নাগরিকের অবসরকালীন আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ একটি অংশ সত্তরের উর্ধে চলে যাবে এবং দেশ তখন একটি দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়বে বলে তার আগাম পরিকল্পনা হিসেবে এই কর্মসূচি অনেকটা সহায়ক হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এবিএম আবু হানিফ তার বক্তব্যে বলেন, “যতই দিন যাচ্ছে পরিবারগুলো একক হয়ে যাচ্ছে। তাই একক পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ মানুষদের দেখভালের জন্য এই স্কিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই স্কিমে যেন উপযুক্ত সকল মানুষ সংযুক্ত হতে পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে অ্যাডভোকেসি করতে হবে।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুশান্ত কুমার মাহাতে বলেন, “যে কোনো উদ্যোগে প্রথমদিকে মানুষের ভুল ধারণা থাকে। সময়ের সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। আমাদের মনে রাখতে হবে যা কিছু আইনের মাধ্যমে হয়; তার গ্যারান্টি সরকার অবশ্যই দিয়ে থাকে। তাই সাধারণ মানুষকে এটি বুঝাতে হবে যে কোনো ধরনের ভুল ধারনা ভাঙ্গাতে হবে। এজন্য আমাদেরকে এক সাথে কাজ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের সমাপনি ব্ক্তব্যে সভাপতি মুর্শেদ আলম সরকার বলেন, “এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম সর্বস্তরে জনগণের কাছে পেঁৗছানোর জন্য সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে অনেক মানুষ এই কর্মসূচির সাথে সংযুক্ত হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে এসকেএস ফাউন্ডেশন তার সকল প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।”

মতবিনিময় সভায় আগত সকল অতিথিকে এসকেএস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন নির্বাহী প্রধান রাসেল আহম্মেদ লিটন। একই অনুষ্ঠানে এসকেএস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী প্রধান এবং সভাপতির হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন সর্বজনীন পেনমন স্কিম কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান। সভায় স্কুল কলেজের শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, ইমাম, এনজিও কর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী, জনপ্রতিনিধি, মিডিয়া কর্মী, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা নারী পুরুষসহ বিভিন্ন পেশাজীবিরা অংশগ্রহণ করেন এবং মতামত প্রদান করেন।