গাইবান্ধার তিন উপজেলায় জামানত হারাচ্ছেন ২৮ প্রার্থী

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয়ধাপে গেল মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হয়েছে গাইবান্ধার তিন উপজেলা (গাইবান্ধা সদর, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ) পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ওই তিন উপজেলায় ১৫ জন চেয়ারম্যান, ১৬ জন ভাইস-চেয়ারম্যান ও ১৭ জন মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানসহ মোট ৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ না পাওয়ায় ৮ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস-চেয়ারম্যান ও ১১ জন মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানসহ মোট ২৮ জন প্রার্থী জামানত হারাচ্ছেন।

তিন উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুকূলে এক লাখ টাকা জমা দিতে হয়। আর ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য জমা দিতে হয় ৭৫ হাজার টাকা। নির্বাচনী এলাকার প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পান, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সে অনুযায়ী জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে গাইবান্ধার তিন উপজেলার ২৮ জন প্রার্থীর।

সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের সই করা প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৬৩টি কেন্দ্রে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫৯৯ ভোটের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রদত্ত (কাস্টিং) ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫১। শতকরা হিসেবে যা ৩৮.১৪ শতাংশ। এর মধ্যে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৭ এবং বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৪ হাজার ৯১৪।

ইসির বিধি মোতাবেক, জামানত রক্ষার জন্য প্রদত্ত (কাস্টিং) ভোটের ১৫ শতাংশ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীদের পেতে হতো ২২ হাজার ১১৮ ভোট। সে মোতাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আব্দুল হামিদ মিয়া (আনারস) প্রতীকে ২৫৭ ভোট, মো. নূর-এ-হাবীব (টেলিফোন) ৪ হাজার ৯৫৭, মো. মকদুবর রহমান সরকার (হেলিকপ্টার) ৭৭৭ ও মো. মাজেদুল ইসলাম রিবন (ঘোড়া) প্রতীকে ৯৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।

আর ৫৪ হাজার ৭৯৬ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. আমিনুর জামান রিংকু (দোয়াত-কলম)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ইস্তেকুর রহমান সরকার (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৯৪৪ এবং মো. শাহ আহসান হাবীব রাজীব (মোটর সাইকেল) প্রতীকে পেয়েছেন ৩১ হাজার ৮১৬ ভোট।

এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাস্ট হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৮ ভোট। শতকরা হিসেবে যা ৩৮.১৪ শতাংশ। এর মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯৪ এবং বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ৮ হাজার ৬৫৪। জামানত রক্ষার জন্য প্রার্থীদের পেতে হতো ২২ হাজার ১১৭ ভোট।

সে অনুযায়ী, ভাইস চেয়রম্যান প্রার্থী মো. আব্দুর রাজ্জাক (উড়োজাহাজ) প্রতীকে ১২ হাজার ৯১১ ভোট, মো. আল আমিন রুহুল (তালা) প্রতীকে ১১ হাজার ৭২২, মো. নিজাম উদ্দিন খাঁন (মাইক) প্রতীকে ৭ হাজার ৪৯০, মো. মাহমুদুর রহমান (বৈদ্যুতিক বাল্ব) প্রতীকে ১৬ হাজার ৪১৯, মো. মিলন হোসেন (বই) প্রতীকে ১০ হাজার ৯০৮ ও সনজীবন কুমার দেব (টিয়া পাখি) প্রতীকে ১৩ হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।

আর ৩৭ হাজার ৩৭১ ভোট পেয়ে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম মিলন (চশমা)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শরিফুল ইসলাম সনজু (টিউবওয়েল) পেয়েছেন ২৮ হাজার ৩৪২ ভোট। সেইসাথে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাস্ট হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২ ভোট। শতকরা হিসেবে যা ৩৮.০৩ শতাংশ। এর মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ১১৭ এবং বাতিলকৃত ভোট ৬ হাজার ২৩৮।

জামানত রক্ষার জন্য প্রার্থীদের পেতে হতো ২২ হাজার ৫৫ ভোট। সে মোতাবেক, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী মোছা. তাসলিমা সুলতানা স্মৃতি (ফুটবল) প্রতীকে ১১ হাজার ১২৪, মোছা. পারুল (বৈদ্যুতিক পাখা) ৩ হাজার ৯৯৫, মোছা. রওশন আরা মুক্তি (সেলাই মেশিন) ৪ হাজার ৭৮১, মোছা. শিল্পী খাতুন (প্রজাপতি) ১৫ হাজার ২৯৪ ও মোছা. হাছিনা বেগম (কলস) প্রতীকে ৬ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন। আর ৯৯ হাজার ৮৭ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মোছা. মোর্শেদা বেগম (পদ্ম ফুল)।

এদিকে; পলাশবাড়ী উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ২০৯ জন। এ উপজেলার ৮৩টি ভোট কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৬৭ হাজার ২৯৩। এর মধ্যে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৬৪৪ এবং বাতিলকৃত ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৬৪৯। ইসির বিধি অনুযায়ী, জামানত রক্ষার জন্য প্রদত্ত (কাস্টিং) ভোটের ১৫ শতাংশ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীদের পেতে হতো ১০ হাজার ৯৪ ভোট।

সে মোতাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জরিদুল হক (কাপ-পিরিচ) প্রতীকে ৭ হাজার ৫১৯ ভোট, মো. তহিদুল আমিন মন্ডল সুমন (ঘোড়া) ৮ হাজার ৫৮, মো. নাজিবুর রহমান (আনারস) ৫ হাজার ৯৮১ এবং মো. শামিকুল ইসলাম সরকার (শালিক) প্রতীকে ৫ হাজার ৪১৭ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন। আর ১৯ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আলহাজ্ব একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ (মোটর সাইকেল)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম (দোয়াত-কলম) প্রতীকে ১৮ হাজার ৭৪ ভোট পেয়েছেন।

অন্যদিকে; ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাস্ট হয়েছে ৬৭ হাজার ২৯৩ ভোট। এর মধ্যে বৈধ ভোট ৬৩ হাজার ৩৬৮ এবং বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৯২৫ ভোট। এ উপজেলায় ২৪ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. আবু ফরহাদ মন্ডল (তালা)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ এস এম রফিকুল ইসলাম মন্ডল রিপন (টিউবওয়েল) প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৭৮৪ ভোট এবং আবু রেজা মো. ফিরোজ কামাল চৌধুরী (চশমা) প্রতীকে ১৮ হাজার ২৭৮ ভোট পেয়েছেন।

এছাড়া এ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ৬৬ হাজার ৮১। এর মধ্যে বৈধ ভোট ৬২ হাজার ১৫৬ এবং বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৯২৫ ভোট। জামানত রক্ষার জন্য পেতে হতো ৯ হাজার ৯১২ ভোট। ফলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জেএম হামিদা আক্তার চৌধুরী (সেলাই মেশিন) ৫ হাজার ১৬৮ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।

আর মোছা. আনোয়ারা বেগম (কলস) প্রতীকে ২১ হাজার ৯৫৮ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোছা. রিক্তা বেগম (ফুটবল) প্রতীকে ১৭ হাজার ৮৬৭ এবং উম্মে কুলছুম (হঁাস) প্রতীকে ১৭ হাজার ১৬৩ ভোট পেয়েছেন।

অপরদিকে; গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৭২টি ভোটকেন্দ্রে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮। এর মধ্যে বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩ এবং বাতিলকৃত ভোট ৩ হাজার ৫০৫। এ উপজেলায় ৯১ হাজার ৪৮ ভোট ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. শাকিল আলম বুলবুল (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আব্দুল লতিফ প্রধান (মোটর সাইকেল) প্রতীকে পেয়েছেন ৮২ হাজার ৪৫ ভোট।

এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কাস্ট হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮ ভোট। এর মধ্যে বৈধ ১ লাখ ৬৭ হাজার ২ এবং বাতিল হয়েছে ৯ হাজার ৫৯৬ ভোট। জামানত রক্ষার জন্য পেতে হতো ২৬ হাজার ৪৯০ ভোট। ফলে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পাপন মিয়া (তালা) প্রতীকে ১০ হাজার ৭২৯ ভোট, মো. মাহাবুর রহমান (টিয়া পাখি) ১৫ হাজার ৬৫৩ এবং মো. মেসবাহ নাহিফুদ দৌলা (টিউবওয়েল) ১৭ হাজার ১২০ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।

এ উপজেলায় ৬৫ হাজার ৯৬৩ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. আব্দুল মতিন মোল্লা (চশমা)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান মো. শরিফুল ইসলাম সরকার (মাইক) পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৫৩৭ ভোট।

সেইসাথে এ উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮। এর মধ্যে বৈধ ভোট ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৪৮ এবং বাতিলকৃত ১২ হাজার ৯৫০ ভোট। জামানত রক্ষার জন্য পেতে হতো ২৬ হাজার ৪৯০ ভোট। ফলে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা খাতুন (ফুটবল) ১৭ হাজার ২৮১ ভোট, মোছা. আফরুজা খাতুন (হাঁস) ২৫ হাজার ৭৬৫, মোছা. মমতা বেগম (কলস) ২৩ হাজার ১, মোছা. সাকিলা বেগম (পদ্ম ফুল) ১২ হাজার ৯০৪ এবং মোছা. সাথী আক্তার (বৈদ্যুতিক পাখা) প্রতীকে ৫ হাজার ৪৩১ ভোট পেয়ে জামানত হারাচ্ছেন।

আর ৪৫ হাজার ২১৪ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পাপিয়া রানী দাস পাখি (সেলাই মেশিন)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উম্মেজাহান (প্রজাপতি) প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৫২ ভোট।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থী মোট কাস্টিং ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট পেলে নিয়ম অনুযায়ী জামানত ফিরে পাবেন। যদি ১৫ শতাংশের নিচে কেউ ভোট পান তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।