গাইবান্ধা হাসপাতাল থেকে জেনারেটর উধাও!

তিনটি জেনারেটরের একটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। সচল বাকি দুটি জেনারেটর দিয়ে চলছে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের কার্যক্রম। গত বছরের জুনে আরও একটি জেনারেটর সরবরাহ করে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু হাসপাতালে সেই জেনারেটরের কোনো অস্তিত্ব নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে চারটি নতুন এসিসহ একটি জেনারেটর সরবরাহ করে গণপূর্ত বিভাগ। গত বছরের ২ জুন সম্পূর্ণ কাজ বুঝে নিয়ে হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহফুজার রহমান নতুন চারটি এসি স্থাপন, দুটি এসি মেরামত ও একটি জেনারেটর বুঝে পেয়েছেন বলে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে প্রত্যয়ন দেন। তার প্রত্যয়ন অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা খোঁজ নিতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এসি থাকলেও হাসপাতালের ভেতর, বাইরে ও সিঁড়ির নিচ থেকে করিডোর সবখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া যায়নি জেনারেটর। গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের স্টোর কিপার, হিসাব রক্ষক কেউই হদিস দিতে পারেননি গণপূর্ত বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত জেনারেটরের।

হাসপাতাল সূত্র জানা যায়, তাদের একটি জেনারেটর অনেকদিন ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের পেছনের একটি কক্ষে পড়ে আছে। আর দুইটি জেনারেটরের একটি হিসাবরক্ষক নুরে ইসলামের কক্ষ থেকে চলে আরেকটি ব্যবহার হয় অপারেশন থিয়েটারে। যার একটি জেনারেটর দান করে নাহিদ কটন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আর বাকিগুলো হাসপাতালের সংগ্রহ করা। কিন্তু গত বছর গণপূর্ত বিভাগ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো জেনারেটর পায়নি।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঠিকাদার সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছে, এসি ও জেনারেটর বুঝে পেয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রতিবেদনও দিয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে, তারা জেনারেটর কোথায় রেখেছে।

গণপূর্ত বিভাগের এমন দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেন হাসপাতালের স্টোর কিপার বিষ্ণু কুমার ও হিসাব রক্ষক নুরে ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের স্টোরের এক কর্মচারী জানান, গণপূর্ত বিভাগের দেয়া জেনারেটর বুঝে পেয়ে যদি কোনো কর্মকর্তা প্রত্যয়ন দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনিই বলতে পারবেন জেনারেটর কী করেছেন।

হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. মাহফুজার রহমান ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি অনেক আগের ঘটনা। খোঁজ না নিয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে কথা হয় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবিল আয়ামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর কবীর তনু।
তিনি বলেন, হাসপাতালের মতো একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে যদি জেনারেটর সরবরাহ করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি গেল কোথায়। তত্ত্বাবধায়ক বুঝে পেয়ে থাকলে স্টোর কিপার জানবে না কেন। কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।

২০১৯-২০ অর্থ বছরে নতুন চারটি এসি সরবরাহ, দুটি এসি মেরামত এবং জেনারেটর সরবরাহ বাবদ প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগের একটি সূত্র।