গাজীপুরে বিএনপি নেতাকে চাঁদা না দেওয়ায় রিসোর্ট বন্ধ কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যস্থতায় চলছিল এক বছর

গাজীপুরে বিএনপি নেতার দাবি করা মাসিক চাঁদা না দেওয়ায় একটি রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মহানগরের টেক কাথোরা এলাকায় রিভেরি নামক ওই রিসোর্টের মূল ফটকে বুধবার ট্রাক দিয়ে বালু ফেলে যাতায়াতের পথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায় ওই রিসোর্টের মূল ফটকে বালুর স্তূপ। অভিযুক্ত মো. রাসেল রানা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক ও টেক কাথোরা এলাকার আবদুল ওয়াদুদ মোক্তারের ছেলে।
সূত্র জানায়, এক বছর ধরে রাসেল রানা ওই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছেন। রিসোর্টের উন্নয়নকাজ তাকে দ্বিগুণ রেটে দিতে বাধ্য করাসহ নানাভাবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে হয়রানি করে আসছিলেন এ নেতা। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার দ্বারস্থ হয় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। পরে ওই নেতার মধ্যস্থতায় রিসোর্টটি চালিয়ে আসছিলেন তারা। সম্প্রতি রাসেল রানা আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
রিসোর্টের চেয়ারম্যান এহছানুল কাদীর বলেন, ৪ অক্টোবর রাসেল রানা ফোন করে জানান, তাকে গত দুই মাসের চাঁদা এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। না হয় লোকজন নিয়ে রিসোর্ট ভাঙচুর করা হবে।
পরে রিসোর্টে গিয়ে স্টাফদের সঙ্গে ভয়ভীতি দেখান রাসেল রানা। একপর্যায়ে রিসোর্টের সব হটলাইন বন্ধ করে দেন এবং স্টাফদের একটি কক্ষে নিয়ে তালা মেরে রাখেন। পরে রিসোর্ট বন্ধ করে স্টাফদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখন রিসোর্টে কয়েকজন সিকিউরিটি ছাড়া কেউ নেই। এ অবস্থায় বুধবার ট্রাক ভর্তি বালু এনে রিসোর্টের মূল ফটকে ফেলে রাখে। উল্লিখিত বিষয়ে তিনি গাজীপুরে জেলা প্রশাসক ও মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
রাসেল রানা রিসোর্টের এক ব্যবস্থাপককে ফোন করেন। যার কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। সেই কলে রাসেল রানা বলেন, ‘তুই ম্যানেজার বেডা তোরে আমি বললাম, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত, চেয়ারম্যান (রিসোর্টের চেয়ারম্যান) রিসোর্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এখন থেকে গেস্ট ডুকানো বন্ধ। আমি সিকিউরিটি গার্ডকে বলে দিতাছি। আজ মনে হয় গেস্ট ডুকসে তাই না। এখন থেকে আর একটা গেস্টও ডুকবে না। এ সময় ম্যানেজার বলেন, চেয়ারম্যান এলে আমি কথা বলি। তখন রাসেল রানা বলেন, চেয়ারম্যান এখানে আসতে পারবে না। এলে আমি এলাকার সব লোক নিয়ে ভিতরে ডুকমু।
ম্যানেজার পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খায়রুলকে ফোন ধরিয়ে দিলে রাসেল রানা তাকে বলেন, তুমিকি আমারে চিন? বাড়ি কই তোমার? শোন এই রিসোর্টে অবৈধ ব্যবসা হয়, খারাপ অপকর্ম হয় বুঝছ। এখন থেকে রিসোর্টের চেয়ারম্যানকেও ডুকতে দিবা না। সে যদি ডুকে তাইলে আমি কিন্তু তোমারে বাইর কইরা দিমু। যদি একটা লোক ডুকে তাইলে তোমার পিঠের চামড়া থাকব না। বইলা দিলাম। গেটে তালা লাগাও।’
চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বিএনপি নেতা রাসেল রানা বলেন, ওই রিসোর্টে অবৈধ কাজ হয় তাই এলাকার লোকজন নিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গেটের সামনে কে বা কারা বালি ফেলেছে সেটি তার জানা নেই।
গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সিদ্দিক হোসেন বলেন, রিসোর্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং চাঁদা দাবির একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমরা তাদের (রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ) রিসোর্ট চালু করতে বললেও তারা নাকি সাহস পাচ্ছে না। এ ছাড়া রাসেল রানাও চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন