চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ড-বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ৪৯

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।

রোববার (৫ জুন) বিকেলে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেন।

এর মধ্যে সেসব মরদেহ শনাক্ত করা গেছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তবে সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহম্মদ মমিনুর রহমান জানান, এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৫ জন নিহত ও ১৬৩ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, রাত থেকে দিনভর হুইসেল বাজিয়ে একের পর এক আসছে অ্যাম্বুলেন্স। আর সেই অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানো হচ্ছে পুড়ে যাওয়া একের পর এক মরদেহ। এ যেন লাশের মিছিল। সেই মিছিলে এখন পর্যন্ত যোগ হলো ৪৫টি মরদেহ। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন।

এছাড়া আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ঘটলো এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এরপর রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসতে শুরু করে মরদেহ। এখনো এসব মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা জানা যায়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

শনিবার রাতের এই দুর্ঘটনায় চার শতাধিক দগ্ধ ও আহত হয়েছেন।

এদিকে আহতদের মধ্যে শ্রমিক, পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অনেককে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওই ডিপোতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার রয়েছে। কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন লাগার পর কনটেইনারগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে তিন-চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।

অগ্নিদগ্ধদের জরুরি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান বলেন, ছুটিতে থাকা সব চিকিৎসক-নার্সকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এতসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত নেই। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ, স্যালাইন, পেইন কিলার নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর অনুরোধ করছি সবাইকে। সেই সঙ্গে আশপাশের উপজেলা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক আনা হয়েছে। তবু চিকিৎসা দিয়ে পেরে উঠছি না আমরা।

চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রাজিব পালিত বলেন, দগ্ধদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন। এ জন্য রক্ত চেয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। আশপাশের সবাইকে হাসপাতালে এসে রক্ত দিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

রোববার সকাল ১০টার দিকে এ রিপোর্ট লেখার সময় চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট যোগ দিয়েছে। এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট কাজ করছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাত বাড়ার সঙ্গে একের পর এক গুরুতর আহতদের আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আহতদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জরুরি বিভাগে তাদের নাম তালিকাভুক্ত না করেই আঘাত অনুসারে তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. রুবেল রানা জানান, ফায়ার সার্ভিসের কাছে রাত ৯টা ২৫ মিনিটে আগুনের খবর দেওয়া হয়। এরপর সেখানে প্রাথমিকভাবে আটটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। পরে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট যোগ দেয়।

সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানিয়েছেন, কেমিক্যালের কনটেইনার থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে একের পর এক কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার সময় সেখানে কয়েকশ শ্রমিক কাজ করছিলেন। আহত-দগ্ধ বেশিরভাগ লোককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার এসআই নাসির উদ্দিন জানান, কনটেইনার ডিপোটিতে রপ্তানি পণ্য মজুত রাখা হতো। আগুনের খবর পেয়ে মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

তিনি জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে ডিপোর প্রবেশদ্বারে লোকজন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি স্থানীয় এলাকাবাসীকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে এলাকার মসজিদে মাইকিং করা হচ্ছে।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, কুমিরা ফায়ার সার্ভিস রাত ১০টার দিকে প্রথম ওই কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পায়। আগুন নেভানোর জন্য একটি টিম ঘটনাস্থলে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে।