চলতি বছর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ার শঙ্কা
২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিন বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪৯ জনের। আর শুধু ২০২৩ সালেই মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল মোট ৮৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী। গত বছর একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিল নয়জন।
আর চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৬১৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেইসঙ্গে মারা গেছেন ২১ জন। অর্থাৎ চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী এবং মৃত্যু গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
এ বছরে ঢাকার বাইরের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২২ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে রয়েছেন ৪৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে) রয়েছে ৪৩২ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) রয়েছেন ২১২ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে ২২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে ৩২৫ জন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে তিন জন, খুলনা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাইরে) ৯৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাইরে) ৩০ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাইরে) ৩৭ জন, রংপুর বিভাগের (সিটি কর্পোরেশনে বাইরে) ১৩ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনে বাইরে) ছয় জন রয়েছেন। এ তথ্য থেকে বোঝা যায় এ বছর সিটি কর্পোরেশনের বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
চলতি বছরের ডেঙ্গুর সংক্রমণ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এবছর ডেঙ্গুর পূর্বাভাস যদি জানতে চান, তাহলে আমরা যেটা দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য থেকে যেটা জানা যাচ্ছে, ঢাকার বাইরে কিছু কিছু জেলাতে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব আমরা বেশি পাচ্ছি। চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, চাঁদপুর, এসব জেলায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি পাচ্ছি। যদি আমরা সঠিকভাবে আগাম ব্যবস্থা নিতে পারি, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে। আর যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারি, তাহলে হয়তো ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে এমনকি উপজেলা পর্যায়েও এবার ডেঙ্গু বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু উপজেলা পর্যায়ে এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিতে পারে, বলেই মনে হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে এখন পর্যন্ত এডিস মশার ঘনত্ব ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। কিন্তু এটা যখন ২০ শতাংশের উপরে ওঠে, তখন ডেঙ্গু বেড়ে যায়। এখনো তো সেভাবে বৃষ্টিপাত শুরুই হয়নি, এখনই যেহেতু ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, বৃষ্টিপাত বাড়লে এই ঘনত্ব ২০ শতাংশের উপরে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য আমরা আগাম সতর্ক করার চেষ্টা করছি, যেন সবাই মিলে সঠিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কাজ করে।
এ কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, সারাদেশেই এখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে, বৃষ্টি হলে এডিস মশা বাড়বে। এডিস মশা বাড়লে ডেঙ্গু বাড়বে। বৃষ্টি হলে বিভিন্ন জায়গায় থাকা ছোট বড় পাত্রে যে পানি জমা হবে, সেগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করি, সেসব জায়গায় এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এডিস মশার প্রজনন বাড়লে ডেঙ্গুও বাড়বে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন