একদিনেই সড়কে ঝরলো ২১ প্রাণ

ঈদের চতুর্থ দিনে আট জেলায় সড়ক-মহাসড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২১ জনের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকালের মধ্যে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বেশি নিহত হয়েছে ফেনী জেলায়। ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে আনন্দভ্রমণ করতে গিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

এছাড়া কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে সিএনজি ও কভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তিনজন। সিরাজগঞ্জে তিন বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে তিনজনের। ফরিদপুরেও আলাদা দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইল, পাবনা, গোপালগঞ্জ ও ভোলাতে সড়কে প্রাণ গেছে একজন করে।

অন্য সময় ঈদে ঘরমুখো মানুষের আনন্দ ম্লান হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায় দুর্ঘটনার কারণে। সে তুলনায় এবার ঈদের আগে সড়কে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ঈদের পর দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বেড়েছে মৃত্যুর মিছিলও।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরে ফেনী সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া ব্রিজের কাছে কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে একটি পিকনিকের বাস নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত আটজন নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে পিকনিকে গেছিল বাসটি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।

ঘটনাস্থলেই ছয়জন মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই কাওসার। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও একজন মারা যান বলে জানান তিনি।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন সুজন মিয়া (৪০) ও শাহাদাত। নিহত সুজনের বাড়ি বিক্রমপুরের শিকদারবাড়ি। শাহাদাতের বাড়ি ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর গ্রামে। এছাড়াও আহতদের মধ্যে সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের কোনাবাড়ীতে তিন বাসের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে অন্তত আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন। বিকাল ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ সড়কে এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি সৈয়দ সহিদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলায় কিশোরগঞ্জ ভৈরব মহাসড়কে আচমিতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গতকাল সকালে সিএনজি-কভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়েছে। তবে এদের কারো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপ চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ইসতিয়াক আহমদ নামের এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়েছেন। সকালে সখীপুর- গোড়াই সড়কের বোয়ালী উত্তরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসতিয়াক পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের শাকিল আজাদের ছেলে। সে সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

সখীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অমির হোসেন এতথ্যটি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ঘাতক পিকআপ চালক পালিয়ে গেছে।

গোপালগঞ্জে প্রাইভেটকার ও মটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে তুহিন মোল্লা নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী সাখি বেগম আহত হয়েছেন। তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গোপালপুর নামকস্থানে এ দূর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় দুই যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক বাসের চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩১ জন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল ও ভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভাঙ্গা উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ভাঙা হাইওয়ে থানার ওসি আতাউর রহমান জানান।

তিনি বলেন, ফরিদপুর থেকে বরিশালের টেকের হাটগামী একটি লোকাল বাসের সঙ্গে বরিশাল থেকে রংপুরগামী তুহিন পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার বলে জানান ওসি।

নিহতরা হলেন- নগরকান্দা থানার রামনগর গ্রামের ধলা ফকিরের ছেলে বাসের চালক রওশন ফকির ও রাজবাড়ীর পাচুরিয়া গ্রামের লক্ষণ কুন্ডর স্ত্রী বাসের মহিলা যাত্রী মিরা কুন্ড।

ভোলায় মাহেন্দ্র চাপায় মো. পারভেজ নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত পারভেজ সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের সোনাডগী গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের ছেলে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর মহা সড়কের ভোলা অংশের ইলিশা ব্যারিস্টার কাচারী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে মাহেন্দ্রর চালককে ও মাহেন্দ্রটি আটক করেছে পুলিশ। ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই রতন কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে জীবনের প্রথম সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেলেও দ্বিতীয় বার আর বাঁচতে পারেনি পাবনার বেড়ার পাপিয়া। পাপিয়ার বাড়ি পাবনার বেড়া পৌরসভার স্যান্নাল পাড়া গ্রামে। গত বুধবার কোরবানির গোশত নানা নানীকে দেয়ার উদ্দেশ্যে বেড়া থেকে সিএনজিতে বাঘাবাড়ী যাওয়ার সময় সাঁথিয়ার পাটগাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে।

স্থানীয়রা প্রথমে সবাইকে উদ্ধার করে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এর মধ্যে পাপিয়া ও তার দাদীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে পাপিয়ার মৃত্যু ঘটে।

বছর পাঁচেক আগেও ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পরে পাপিয়া। তবে সে যাত্রায় তার প্রাণ না গেলেও পাপিয়ার একটি পা মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সে মানিক মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।