চার হাজার ইয়াবা মিলল পাকস্থলীতে

স্কচটেপ বা পলিথিনে পেঁচিয়ে ইয়াবা ঢোকানো হয় কলার মধ্যে। পরে ওই কলা গিলে ঢাকায় চলে আসে পাচারকারীরা। একটি দুটি নয়, পেটের মধ্যে ঢোকানো হয় তিন থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা।

চালানপ্রতি বাহক পান ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। সামান্য এ টাকার লোভে প্রাণঘাতী কৌশলে ইয়াবা বহন করছে একশ্রেণির মানুষ। পুলিশ বলছে, পেটে ইয়াবা নিয়ে আসার প্রবণতা ইদানীং বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনোভাবে একটি প্যাকেট ফেটে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত।

দেখতে খেজুরের মতো মনে হলেও এগুলো আসলে খেজুর নয়। কালো স্কচটেপে মোড়ানো ইয়াবার পোঁটলা। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পেটে করে ইয়াবার চালানটি ঢাকায় নিয়ে আসার পর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে হারেজ নামে একজনকে। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এক্সরে করার পর পাকস্থলীতে পাওয়া যায় ইয়াবার অস্তিত্ব। একটি দুটি নয়, ৭৭টি ক্যাপসুল আকৃতির প্যাকেট বের করা হয়, যার প্রতিটিতে ৫০টি করে মোট তিন হাজার ৮৫০টি ইয়াবা পায় তারা।

গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ রাজধানীতে আলাদা একটি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে আরও চার জনকে, যাদের সবার পেটেই পাওয়া গেছে ইয়াবা। এ চারজনও টেকনাফ থেকে ঢাকায় পেটের মধ্যে নিয়ে এসেছে ইয়াবার চালান। তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পিস ইয়াবা বড়ি পাওয়া গেছে একেকজনের পাকস্থলীতে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার রাজীব আল মাসুদ (লালবাগ বিভাগ) বলেন, কৌশলে তারা গাড়ির মধ্যে, ব্যাগের ভেতর বা লাগেজের মধ্যে এবং অন্য জায়গায় লুকিয়ে আনতো। একপর্যায়ে যখন আমরা ধরে ফেলি, তখন তারা নিজের শরীরের মধ্যে করে লুকিয়ে আনার শুরু করে। তারা এগুলো পেটের মধ্যে করে আনছে। এ অপারেশনে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের পেটের ভেতর ৩০টি করে পুঁটলি ছিল, তাতে প্রায় ৭৫ হাজার করে ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল।

তিনি আরও বলেন, এদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, টেকনাফের শাপলাপুর নামে একটা জায়গা আছে সেখানে একটা গহিন পাহাড়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে। তারপর তাদের জোর করেই কলার সঙ্গে খাইয়ে দেওয়া হয় ইয়াবা। তারা মাত্র ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নিয়ে আসছে তারা। তারপর যে সরবরাহকারী আছে তাদের কাছে দিয়ে দেয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আসার পর ডাল-ভাত খেয়ে তা বের করে ফেলে।

পেটের মধ্যে ইয়াবার চোরাচালান নতুন নয়। মাদক কারবারিদের নানা কৌশলের মধ্যে এটি একটি হলেও কৌশলটি বিগত দু-এক বছরে খুব একটা প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি আবারও প্রাণঘাতী কৌশলটি ব্যবহার লক্ষ করছেন বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

ডিবির কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতিনিয়ত মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে এবং চলমান আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো কারণে পলিথিন ফেটে বা লিক হয়ে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ইয়াবায় থাকা মিথঅ্যামফিটামিন পদার্থ পেটে থাকা অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে তৈরি হবে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ক্ষতি হবে লিভার, কিনডিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের। হতে পারে মৃত্যুও, যা আগেও ঘটেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ কে এম লুৎফুল কবির বলেন, মিথঅ্যামফিটামিন ভিটামিন যেটা ইয়াবার মধ্যে থাকে। সেই মিথঅ্যামফিটামিনের ভিটামিনের নরমাল পিএইচ আমাদের শরীরে আছে সেটা হলো ৪ দশমি ৬৮। আমাদের শরীরে আমাদের পাকস্থলীতে যে পিএইচটা থাকে পাকস্থলীর রস, যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক জুস বলে থাকি, সেটার পিএইচ হচ্ছে এক থেকে তিন বা সাড়ে তিনের মতো। যেটা অম্লীয় বা অ্যাসিডিক পিএইচ আবার মিথঅ্যামফিটামিন ভিটামিন একটা ওষুধ, যেটা অ্যাসিডিক একটা ওষুধ মানে অ্যাসিডিক একটা ড্রাগ। যখন অনেক একসঙ্গে আসবে দেহের মধ্যে এবং সেটা যদি বিস্ফোরিত হয় কোনো কারণে সেটা অ্যাক্সিডেন্টলি হোক বা যে কোনো কারণেই হোক, যদি হয়ে যায় তাহলে হঠাৎ করে পাকস্থলী হাইলি অ্যাসিডিক হয়ে যাবে। অ্যাসিডিক হওয়া মানেটা কি, তাদের পাকস্থলী থেমে যাবে। ফলে লিভার-কিডনি একসঙ্গে থেমে যাবে বা অকেজো হয়ে যাবে। তখন মৃত্যু নিশ্চিত।
পুলিশ বলছে মরণনেশা ইয়াবা পাচারের এমন মারাত্মক কৌশল যাদেরকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেসব বাহকরা সামান্য কিছু টাকার লোভে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে।