দুদকের শরীফের চাকরিচ্যুতি: নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে ১০ আইনজীবীর রিট

হাইকোর্টের পরামর্শে সদ্য চাকুরিচ্যুত হওয়া দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগগুলোর স্বাধীন-নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়।

রিটকারী ১০ আইনজীবী হচ্ছেন- মোহাম্মদ শিশির মনির, রেজওয়ানা ফেরদৌস, জামিলুর রহমান খান, উত্তম কুমার বনিক, মোস্তাফিজুর রহমান, মো. তারেকুল ইসলাম, মীর ওসমান বিন নাসিম, সৈয়দ মোহাম্মদ রায়হান, মো. সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নওয়াব আলী।

রিটে দুদকের চেয়ারম্যান, সচিব, কমিশনার (অনুসন্ধান), কমিশনার (তদন্ত), পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) এবং চাকরিচ্যুত সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দীনকে বিবাদী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তির পক্ষে রিটটি করিনি। আমরা আলোচিত ওই ঘটনায় চাকরিচ্যুত শরীফ উদ্দীন এবং দুদকের পাল্টাপাল্টি যে বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে তার তদন্ত চেয়েছি। কারণ তদন্তেই প্রকৃত সত্য উঠে আসবে জনমনে বিভ্রান্তি দূর হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনে একটি কমিটি গঠন এবং ওই কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা রিটে চাওয়া হয়েছে। সেই সাথে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নথি তলব করে বিষয়টি পর্যালোচনারও আবেদন করা হয়েছে।

এর আগে দুদক কর্মকর্তা শরীফের চাকরি চলে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে ১০ আইনজীবীর চিঠি আমলে না নিয়ে রিট করার পরামর্শ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের বেঞ্চ।

এ সময় তিনি বলেন, শরীফ যদি সত্যিকারের ভুক্তভোগী হয়, তাহলে রিট আকারে আসতে হবে তাকে। তখন আইন অনুযায়ী যা হওয়ার হবে। রিট শোনার পর আদেশ দেওয়ার কথাও বলেন বিচারপতি।

গত রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের কারণ খতিয়ে দেখতে হাইকোর্টকে চিঠি দেন ১০ আইনজীবী। দুদকের মামলা বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন বেঞ্চ ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এ চিঠি দেওয়া হয়।

শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে র‍্যাবের অভিযানে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৯৪ লাখ টাকার চালান বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার পাশাপাশি আদালতের অনুমতি ছাড়াই ব্যাংক হিসাব বন্ধ রাখার মতো গুরুতর ৫টি অভিযোগ ওঠে।

এ ছাড়া ঘুষ না পেয়ে শরীফ হয়রানি করেছেন এমন ছয়জন লিখিত অভিযোগও করেছেন দুদকের কাছে। এসব অভিযোগের সত্যতা মেলায় শরীফকে দুদক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে জানান শীর্ষ কর্মকর্তারা।

২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে কক্সবাজারের ভূমি অফিসের কর্মচারী সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানকে আটকের পাশাপাশি তার বাড়ি থেকে জব্দ করা হয় ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা। জব্দ টাকাগুলো তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রুল জারি করে এক দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন। পরদিন দেওয়া দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টাকাগুলো তাদের ভল্টে রয়েছে। জব্দ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়ায় দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতের অনুমতি ছাড়াই কক্সবাজারে একটি ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেন দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। বিষয়টি আদালতের নজরে এলে শরীফের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অসদাচরণের অভিযোগ ওঠে। এটিও তদন্ত করেছেন দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া গত বছরের ১৬ জুন শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালী বদলি করা হয়। কিন্তু শরীফ কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে বদলি আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। সেই সঙ্গে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সময়ের এক মাস পর ই-মেইলে যোগদানপত্র পাঠানো এবং আরও এক মাস পর সশরীরে যোগ দেওয়াকে শরীফের দোষ হিসেবেই দেখছে দুদক।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের অন্তত ছয়জন ভুক্তভোগী চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না পেয়ে শরীফ উদ্দিন তাদের ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি হয়রানি করেছেন বলে লিখিত অভিযোগ করেন।

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দুদক ১৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পটুয়াখালী জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করে। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনের সময় শরীফের বেশ কিছু অনুসন্ধান এবং পদক্ষেপ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যায়। এ কারণেই তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।