চুয়াডাঙ্গায় নবজাতকের প্রাণের মূল্য হলো মীমাংসায়

চিকিৎসকের অবহেলার কারণে চাঁদের আলো দেখার আর সৌভাগ্য হলো না নবজাতকের। দুনিয়ার বুকে নিকট কেউ মারা গেলেও কিছু দিন সময় যেতে যেতে একসময় ভুলতে শুরু করে। হিসাব মতে সময়ের ব্যবধানে সেই প্রিয় মানুষটিও মন থেকে পর হয়ে যায় একসময়। তবুও এখানে সময়ের ফারাক থাকে। আর এটাই বাস্তবে প্রমাণিত হয়ে আসছে।

কিন্তু নবজাতের মা সুবর্ণা সরকার (২১) তার বুকের ধনকে আটকে রাখতে পারলো আর।

তারপরও সদ্যভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতককে একদিনেই মন থেকে পর করে দিলো মা-স্বজনরা। শিশুটি চিকিৎসকের অবহেলার কারণে মৃত্যুর কারণ দেখা গেলেও স্বজনরা বিষয়টি বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেয়নি। অবশেষে নবজাতকের প্রাণের মূল্য হলো মীমাংসায়। স্বজনদের এ হৃদয় বিদারক ঘটনা একদিনেই মীমাংসার মাধ্যমে মেনে নেয়ায় দাগ কেটেছে স্থানীয়দের মনে। ফলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে জেলা জুড়েও। এমন করুণ কাহিনী জন্ম দেয়াকে মানবিক দৃষ্টিতে ভাবিয়ে তুলেছে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয়দের।

(৩১ মার্চ) বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত উপসম নার্সিং হোমে এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে, চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ক্লিনিক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ভাঙচুর ও চাঁদাবাজীর অভিযোগে ফেরদৌস ওয়াহিদ হৃদয় নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। এরপর দু পক্ষের মধ্যে সমঝোতায় মাধ্যমে চিকিৎসক জান্নাতুল আরার সাথে মীমাংসা করে স্বজনরা। কিন্তু এতো সহজে কীভাবে মেনে নিল এনিয়ে প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার পাটিকাবাড়ি বাজার পাড়ার সরজিত রায়ের স্ত্রী সুবর্ণা সরকার (২১) প্রসব বেদনা নিয়ে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের উপশম নার্সিং হোমে ভর্তি হন। এরপর দুপুর ৩টার দিকে তীব্র প্রসব বেদনা উঠলে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেড় ঘণ্টা ধরে নার্স আয়ার চেষ্টার পর নবজাতক ভূমিষ্ট না হলে উপশম নার্সিং হোমের মালিক ডা. জিন্নাতুল আরাকে ডাকা হয়। পরে তিনি অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে মৃত সন্তান ভূমিষ্ট করান। নার্স ও আয়াকে দিয়ে কাজ করানোর কথা শোনার পর উত্তেজিত স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। চুয়াডাঙ্গার কয়েকজন যুবক পৌঁছান উপশম নাসিং হোমে। সেসময় তাদের হামলায় ক্লিনিকের একটি দরজার কাঁচ ভেঙে ফেলা হয়।

এ ঘটনা শোনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ।

সেসময় ক্লিনিক ভাঙচুর ও চাঁদাবাজীর অভিযোগে আটক করা হয় ফেরদৌস ওয়াহিদ হৃদয়কে। পরে সদর থানায় গিয়ে মীমাংসায় বসেন স্বজন ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর কারণ হলেও অবশেষে দু পক্ষের সমঝোতায় বিষয়টি মীমাংসা ডিসমিস হয়। ছেড়ে দেয়া হয় আটককৃত ফেরদৌস ওয়াহিদ হৃদয়কে।

এ বিষয়ে মৃত নবজাতকের বাবা সরজিত রায়ের অভিযোগ বলেন, তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে নরমাল ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নিয়ে উপশম নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারের নেয়া হয় তাকে। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। আয়া ও নার্স দিয়ে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করায় নবজাতের মৃত্যু হয়। পরে ডাক্তার জিন্নাতুল আরাকে ডাকলে তিনি এসে মৃত সন্তান প্রসব করান। শুধুমাত্র চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের দায়িত্বে অবহেলার এমনটি ঘটে বলেও উপসমে থাকা অন্যান্য রোগী স্বজনদের মন্তব্য।

তারপরও এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপশম নার্সিং হোমের মালিক ডা. জিন্নাতুল আরার দাবি করে বলেন, অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরই সেখানে তার ছোট বোন ডা. লিফা নারসিস চৈতি উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, শিশুটি উল্টোভাবে মৃত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। এখানে চিকিৎসকের কোন অবহেলা নেই।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, খবর পেয়ে উপশম নার্সিং হোমে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে মীমাংসায় সমঝোতা। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় পুলিশ হেফাজতে থাকা ফেরদৌস ওয়াহিদ হৃদয়কে ছেড়ে দেয়া হয়। এছাড়া মৃত নবজাতককে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।