চুয়াডাঙ্গায় মরে যাচ্ছে ভুট্টাক্ষেত; নজরদারী নেই কৃষি বিভাগের

দেশে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় জনগণকে প্রতি ইঞ্চি জমিতে আবাদ করার কথা বার বার বলছে সরকার। এছাড়াও কৃষিখাতে প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি থাকা সত্ত্বেও একপ্রকার বাধ্য হয়েই জনগণসহ তাদের জীবন বাঁচাতে ফসল ফলাতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা।

এরই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ভুট্টা চাষ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষীরা। ভাইরাসের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেসব ফসল। তারপরও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের মাঠে দেখাও যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চাষীরা। আর কয়েকদিন পরই মাঠ থেকে ভুট্টা তোলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিল তাদের। কিন্তু ঘরে তোলার আগেই ভুট্টা নষ্ট হয়ে পড়ে থাকছে মাঠেই।

কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে পরামর্শসহ কৃষকদের পাশে এসে সঠিকভাবে নেয়া হচ্ছেনা কোনো পদক্ষেপও।
একদিকে, কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্য ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনের তুলনায় কৃষকসহ ভালোভাবে কৃষি ফসল ফলনের প্রতি লক্ষ্য কম থাকায় ভুট্টা চাষে শুধু হিমশিমই খাচ্ছে না কৃষকদের গরচাই দিতে হচ্ছে বেশি। ফলে ভুট্টার সঙ্কট দেখা দেয়ার সম্ভাবনায় ভোক্তা পর্যায়ে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে বলেও বলছে ভুক্তভোগী কৃষকরা।

অপরদিকে, এবার বাজারে দাম ভালো হওয়ায় ভুট্টা চাষের ওপর বেশি ঝুঁকেছে কৃষকরা। আবার ফসলের ফলনও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গাছ লাগানোর পর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে গাছে ‘ফিউজারিয়াম স্টক’ নামে ছত্রাকজনিত রোগ হওয়ার ৩ দিনের মাথায় ভুট্টা গাছ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাঠেই। ‘ফিউজারিয়াম স্টক’ এমন একটি ভাইরাস ভুট্টার গোড়া থেকে শুরু করে মূলকাণ্ডসহ ভুট্টা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভুট্টা বাঁচাতে দোকান থেকে ওষুধ কিনে ছিটানো হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষকরা।

শুধু সড়াবাড়িয়ায় নয় দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এমন দঃস্বপ্নে পতিত ভুট্টাচাষীরা। কিন্তু বাজারে ভুট্টার দাম ভালো থাকায় অনেক কৃষকই এবার বেশি বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করেছে। কিন্তু ভাইরাসের কারণে ভুট্টার এমন দুর্গতিতে নিঃস্ব ও দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা।

এদিকে, ভুট্টা চাষের ভালো ফলনের আশা নিয়ে জেলার অনেক কৃষকই বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এ চাষে নেমেছে। কিন্তু ফসল নষ্টের কারণে এখন মাথায় হাত তুলতে বাধ্য হয়ে পড়েছে তারা। কীভাবে তাদের ঋণ শোধ করবে এ নিয়ে হারিয়ে ফেলেছে ভাষাজ্ঞানও।

এমন চিত্র চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে। তবে ওই অঞ্চলের মাঠে মাঠে ভুট্টার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন তৈরী হলেও সেইসব কৃষকদের দুঃস্বপ্ন এঁকে দিয়েছে ‘ফিউজারিয়াম স্টক’ নামের এক ভাইরাস। এতে করে বিঘা বিঘা জমির ভুট্টা নষ্ট হয়ে গেছে।

যার কারণে এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করতেও প্রতি কৃষকের ক্ষতি হবে প্রায় অর্থ লক্ষ টাকা। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলে মাঠে মাঠে এমন ‘ফিউজারিয়াম স্টক’ ছত্রাকজনিত রোগের জন্ম হলেও প্রতিকারে কাজ হচ্ছে না কোন কীটনাশকে। তবে এসব ভুট্টা চাষে কৃষকদের দাবি ফসলের প্রতিকার পেতে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের কোন ছায়াই দেখা যাচ্ছে না। ফসল বাঁচাতে কী ওষুধ দেবে তা ভেবে পাচ্ছেনা কৃষকরা। যার ফলে ফসল বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও তাতে ব্যর্থ হতে চচ্ছে কৃষকদের। ওষুধের দোকানে গেলে ওষুধ দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না তাতে।

এদিকে, ফসলের এমন দুর্গতি দেখা দিলেও তা প্রতিকারে কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার কথা থাকলেও মাঠে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা না বলেও বলছে কৃষকরা। অথচ তাদের দায়িত্বই কৃষকদের যেকোনো ফসলে সঠিকভাবে তদারকি করা বা কোন রোগ বালাই হলে তা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। সবকিছু উপেক্ষা করায় একপ্রকার তাদের অবহেলার কারণেই সোনার বাংলাদেশে কৃষকরা দিন দিন পথে বসার উপক্রম তৈরী হচ্ছে। ফসলের ক্ষতি হলেও কৃষি অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তাকেই দেখা যায় না বলেও দাবি করছে কৃষকরা।

চুয়ডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠে কাজ করছে এবং তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত বছর তাদেরকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ বছর তারা শস্যবজ্য অবলম্বন করেনি। আগামীতে তাদেরকে সতর্ক থাকা দরকার।
চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ভুট্টার চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে। সে হিসাবে জেলায় মোট উৎপাদন হবে ৫ লাখ ৫২০ টন ভুট্টা। যার বাজার মূল্য ৯শ’ কোটি টাকা।