ছেলে-বৌমার অত্যাচারে বাড়ি হারিয়ে এখন পথে পথে এই বৃদ্ধ দম্পতি

কলকাতার আনন্দপুরে মাকে তালাবন্দি রেখে আন্দামানে ঘুরতে গিয়েছিল ছেলে-পুত্রবধূ। দুর্গাপুরে বৃদ্ধাকে একা ঘরে ফেলে দিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায় মেয়ে-জামাই।

রাজ্যের নানা প্রান্তে মা-বাবার সন্তানদের এই দুর্বব্যহারের তালিকায় নয়া সংযোজন বাঁকুড়া শহরের হরিতকি বাগান। এখানে জন্মদাত্রী বাবা-মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিল ছেলে-বৌমা। বাবা-মাকে তাড়িয়ে সেই ঘর ভাড়া দিয়ে এখন রোজগারে ব্যস্ত তারা। প্রতিবেশীরা গোটা ঘটনায় বেজায় বিরক্ত।

অভিযোগ বাড়িতে থাকলে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচায় চালানো হত। এমনকী ওই বৃদ্ধ দম্পতির বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেওয়া হয়। ছেলে-বৌমার বিরুদ্ধে এহেন অমানবিক অত্যাচারের অভিযোগ নিয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন হরিতকি বাগানের ষাটোর্ধ্ব সৃষ্টিধর কর্মকার আর তাঁর স্ত্রী ভারতী কর্মকার।

বৃদ্ধের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে তাদের বসতবাড়ি থেকে বের করে দেয় ছেলে বিশ্বজিৎ এবং পুত্রবধূ মৌসুমী কর্মকার। মাথা গোঁজার ঠিকানা হারিয়ে অসহায় ওই দম্পতির ঠাঁই হয়েছে বিষ্ণুপুরের আত্মীয়র বাড়িতে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাড়িয়ে সেই বাড়ি ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছেন ছেলে-বৌমা।

এই বৃদ্ধ দম্পতির চার মেয়ে ও দুই ছেলে। বাঁকুড়ার কংসাবতী সেচ দপ্তরে টাইপিস্টের সামান্য চাকরি করে সন্তানদের বড় করেছিলেন সৃষ্টিধরবাবু। কর্মস্থলের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের কাছেও ভাল মানুষ হিসাবেই পরিচিত কর্মকার দম্পতি।

এলাকার বাসিন্দারা জানান, ছোট থেকেই বড়ছেলে বিশ্বজিৎ ডানপিটে। সবসময় বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকত। তাই তার লেখা পড়াও ঠিকঠাক হয়নি। কার্যত বাধ্য হয়ে বহু কষ্টার্জিত সঞ্চিত টাকা থেকে বড়ছেলেকে সোনা–রূপার দোকানও করে দেন সৃষ্টিধরবাবু। তাকে বিয়েও দেন। আচমকাই বছর কয়েক আগে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার ছোট ছেলে অমলেন্দুর।

ছোট ছেলের মৃত্যুর পর কর্মকার এই বৃদ্ধ দম্পতি শারীরির এবং মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েন। “তারপর থেকেই মদ খাওয়ার টাকা জোগাড় করতে নানা ছুতো দেখিয়ে বাবার পেনশনের টাকা হাতাতে থাকে বিশ্বজিৎ।” ভারতীদেবী কথাগুলো বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

তার সংযোজন টাকা বন্ধ করতেই তাদের ওপর অত্যাচার বেড়ে যায়। ছেলে-বৌমার সঙ্গে এক ছাদের তলায় থাকলেও তা ছিল নরক যন্ত্রনার। এবছর তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। সৃষ্টিধরবাবুকে দেখতে হয় নিজের তৈরি বসত থেকে তাদের বের করে দিয়ে ভাড়াটিয়া বসাচ্ছে ছেলে-বৌমা। একপ্রকার বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিতে হয়েছে বিষ্ণুপুরের আত্মীয়র বাড়িতে।

এই নিয়ে অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ কর্মকার আর তার স্ত্রী মৌসুমিকে ফোন করা হলে তারা এড়িয়ে যেতে থাকেন। প্রশ্ন শোনা মাত্রই তারা কথা না বলে ফোনের সুইচড অফ করে দেন। নিজেদের অসহায় অবস্থার কথা জানিয়ে বাঁকুড়া সদরের প্রশাসক অসীম কুমার বালার দারস্থ হয়েছিলেন এই বৃদ্ধ দম্পতি।

অসীমবাবু বলেন, সমস্যাটি সমাধানের জন্য সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ছেলে বৌমার অমানবিক আচরণে বাড়িহারা বৃদ্ধ দম্পতির করুণ কাহিনী প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েগিয়েছে বাঁকুড়া জেলা জুড়ে।