জাকলী’র তৃষ্ণার্ত দু’চোখ আজও খুঁজে ফেরে বাবা মাকে!

স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় শরণার্থী শিবির থেকে হারিয়ে যাওয়া আজকের পঞ্চাশোর্ধ মেহেরন নেছা জাকলী আজও তার বাবা মাকে খুঁজে পায়নি। তৃষ্ণার্ত দুটি চোখ তাই আজও খুঁজে ফেরে ৫২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাবা-মা ভাই বোনদের।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুচবিহারের দিনহাটা শরণার্থী ক্যাম্পে হারিয়ে যায় জাকলী। হারিয়ে যাওয়ার সময় সাত বছরের শিশু জাকলীকে নিয়ে আসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পীরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাডঃ গাজী রহমান। তার বাসায় স্থান জোটে কাজের ঝি হিসেবে। সেখানেই দিনের পর দিন বড় হয়ে ওঠে জাকলী। এক সময় যৌবনে পা দেয়। গাজী রহমান নিজেই সাদুল্যাপুর থানার ঘ্যাগার বাজার এলাকার দুলা নামের এক যুবকের সাথে বিয়ে দেন। সেখানে ৬ জন পুত্র কন্যার জনক হয় এ জুটি। ভাগ্যের পরিহাসে জাকলীর স্বামী এক সময় গত হবার পর বাস্তুভিটে টুকুও দখল করে নেয় স্বামীর ছোট ভাই ফূল মিয়া। সন্তানদেন নিয়ে তাই আবার ফিরে আসে জাকলী।

গাজী রহমানের বাড়ির ভিটের এক পাশে ছোট্ট একটি ঘর তুলে সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করে। বিয়ে হবার পর প্রতিটি সন্তান আলাদা হয়ে যায়। এদিকে কয়েক বছর পুর্বে গাজী রহমান পরলোকগমন করেন। তিনি গত হবার পর তার তার পরিবার পরিজনদের করুনা জোটেনি জাকলীর ভাগ্যে। তাই আশ্রয়টুকু ভেঙ্গে নিয়ে যেতে হয় মহাসড়কের পাশে ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনের একটি কক্ষে। এখনও সেখানে মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে বাস করে।

শারিরিক সক্ষমতা না থাকায় জীবিকার অবলম্বন হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তিকেই বেছে নিয়েছে। শিশুকালের কোন কথা স্মরন নেই জাকলীর। শুধু এটুকু মনে করতে পারে- তার বাবার নাম তমিজ মেকার, মার নাম নছিমন, কুচবিহার দিনহাটা এলাকায় থানার পাশেই তাদের বাড়ি ছিল। ১ ভাই ১ বোন এদের নাম মনে নেই তার। ষাট বছরের এই জীবনে জাকলীর অনেক চড়াই উৎরাই গেছে। নানা প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করতে হয়েছে। দুঃখ বেদনা হাসী কান্না অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই জীবনে। অত্যধুনিকতার এই যুগেও জাকলীর পরিবারের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি। হারিয়ে যাওয়া বাবা মা কোথায়? ভাই বোন, তারাই বা কোথায়? বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে? ওদের কথা মনে হলে বুকের ভিতরটা ব্যথায় চিনচিন করে ওঠে। ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তাদের কাছে।

কিন্তু কি করে তা সম্ভব ? স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে শিশুটি হারিয়ে গেছে, দীর্ঘ ৫২ বছরেও তার ভাগ্যে একটা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সনদও জোটেনি। তদবীর করতে না পারায় আজও জোটেনি তার নামে কোন বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতার কার্ড। সমাজের বড় বড় নেতা আর কর্তা ব্যক্তি কারো নজরেই পড়েনি হতভাগী জাকলী। আর এ কারনেই জাকলীরা তাই আমাদের সমাজে চিরকাল অবহেলিতই থেকে যায়!