জুতা পালিশের ক্রিম ব্রাশের সঙ্গে আটকে গেছে সঞ্জয়ের স্বপ্ন

সঞ্জয় ঘোষ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার হাট পাঙ্গাসী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত দেবেন ঘোষের ছেলে। ৬ সদস্যের সংসারের সেজো ছেলে সঞ্জয় (১২)। এই বয়সে বাবার অবর্তমানে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। সঙ্গে তার বড় ভাইও কাজ করে। সেও সাবালক হয়নি। স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া সঞ্জয় অর্ধেক বেলা স্কুলে পড়ে আর অর্ধেক বেলায় জুতা পালিশের কাজ করে বেড়ায়। দিন শেষে দুই ভাই মিলে কাজ করে যা আসে, তাই দিয়ে চলে তাদের অভাবী ৬ সদস্যের সংসার।

সঞ্জয়ের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন, পড়াশোনা করে মানুষ হবে, চাকরি করবে, তাদের অভাবী সংসারে সুখ আসবে, মাকে নিয়ে সবাই মিলে সুখে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু টানাটানির সংসারে পড়াশোনা করা আর সম্ভব হচ্ছে না তার। সম্প্রতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সংসারে অভাবও বাড়ছে দিন দিন।

সঞ্জয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা অনেক বছর আগেই মারা গেছে। তখন সে ছিল ছোট। ৩ বোন ২ ভাই ও মাসহ ৬ সদস্যের অভাবের সংসার তাদের। কোনো জমিজমা নেই। বাপ-দাদার ব্যবসাই ছিল জুতা সেলাই আর পালিশের। অভাবের তাড়নায় উত্তরাধিকার সূত্রে বাপ-দাদার হাতবদল হয়ে জুতা পালিশের ব্রাশ ক্রিম তার হাতে উঠে এসেছে। সকালে স্কুলে গিয়ে ১টায় এসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জুতা পালিশের কাজ করে সে। আয় রোজগার যা হয় তাই দিয়ে চাল-ডাল কিনে নিয়ে যেতে হয় বাড়ি। তার মা অলোকাও অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারের যোগান দেন।

সে আরও জানায়, আমি ছোট বলেই অনেকেই কাজ দিতে চায় না, আর দিলেও পারিশ্রমিক নিয়ে অনেকের গালমন্দ হজম করতে হয়। চোখে-মুখে ভাবনার ছাপ নিয়ে চলা জুতা পালিশের ক্রিম ব্রাশের সঙ্গে আটকে গেছে সঞ্জয়ের স্বপ্ন।
এ ব্যাপারে তার হাত থেকে ব্রাশ আর ক্রিম ফেলে দিয়ে খাতা-কলম তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ছোট্ট সঞ্জয়ের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার সচেতন মহল।