ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে ‘লুকোচুরি’

এক নারীকে অস্ত্রের জোরে তুলে নিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি ১৮ দিনেও। কবে প্রতিবেদন জমা পড়বে, এখন পর্যন্ত তদন্তের অগ্রগতি কোন পর্যায়ে সে বিষয়েও কিছু বলতে চাইছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা।

এমনকি কত দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সেই বিষয়টিও খোলাসা করছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা।

সাধারণত তদন্ত কমিটি গঠনের সময়ই এই বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু এই ঘটনায় সেটি স্পষ্ট করেনি পুলিশ সদরদপ্তর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘যখন তদন্ত কমিটি হয়েছিল তখন ছিল পুলিশ সপ্তাহ ফলে তদন্ত কমিটির আদেশটি দেখার সুযোগ হয়নি। এছাড়া আমি জানি না যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কি না। তবে যদি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া না হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত কমিটির সঙে সংযুক্ত কর্মকর্তারা হয়ত বা সময়ের আবেদন করেছেন।’

তবে পুলিশ সদরদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল এই কমিটিকে। কিন্তু সেই প্রতিবেদন জমা পড়েনি নির্ধরিত সময়ে।

ওই কর্মকর্তা এটাও বলেন যে, নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে না পারলে সময় নেয়া হয়। এই ঘটনাতেও নিশ্চয় সময় নিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে কত দিনের সময় নেয়া হয়েছে, সেটা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

ডিআইজি মিজানের কার্যক্ষেত্র ছিল ঢাকা মহানগর পুলিশে। তিনি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে অভিযোগ উঠার পর তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এক নারী অভিযোগ করেছেন, পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের কাছে তার বাসা থেকে তাকে কৌশলে গত বছরের জুলাই মাসে তুলে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। পরে বেইলি রোডের তার বাসায় নিয়ে তিনদিন আটকে রাখেন। এরপর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ জুলাই ডেকে আনা হয় এবং ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার একটি ভাড়া বাড়িতে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন মিজান। অথচ মিজান পূর্ব-বিবাহিত।

ওই নারী আরও জানান, কয়েক মাস কোনো সমস্যা না হলেও ফেসবুকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একটি ছবি তোলার পর ক্ষেপে যান মিজান। বাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলায় তাকে গত ১২ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়।

দুটি মামলায় জামিনে বেরিয়ে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা মিজানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন ওই নারী।

গত ৮ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ শুরুর আগেই বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। আর এ কারণে পুলিশ সপ্তাহে যোগ দেননি তিনি।

পুলিশ সপ্তাহের সময় বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকর্মীদেরকে জানান, পুলিশ সপ্তাহ শেষ হলেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আর ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মঈনুর রহমান চৌধুরীকে প্রধান করে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশী এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমানকে নিয়ে কমিটি করার কথাও জানানো হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এফ অ্যান্ড ডি) মঈনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন এখনও জমা দেওয়া হয়নি। জমা দিলে আপনাদের জানানো হবে। এটা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার সময় লাগবে।’

তদন্ত কমিটিকে কতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এতকিছু জেনে লাভ নেই। শুধু এতটুকুই জেনে রাখেন প্রতিবেদন দিলে আপনাদের জানানো হবে।’

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের এত বড় কর্মকর্তা বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এর আগে আসেনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একজন ডিআইজি আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শিশু চুরি ও পাচারের অভিযোগ উঠে। ২০১২ সালে বিচারিক আদালত তাদেরকে এই অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

ওই ঘটনার পর মিজানের ঘটনাটি নিয়ে স্বভাবতই তুমুল আলোচনা চলতে থাকে শুরু থেকে। কিন্তু এর মধ্যেই এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশকারী এক সাংবাদিককেও আবার হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সাংবাদিক অভিযোগ করতে গেলে শুরুতে থানা তা নিতেও রাজি হয়নি। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, জানিয়েছেন, থানা অভিযোগ নিতে বাধ্য।

আবার ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, গেত ১৫ জানুয়ারি এমন প্রশ্ন শুনে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি সেদিন বলেন, ‘একথা অনেকবার বলেছি, আপনারা একটা কথা কেন বার বার জিজ্ঞাসা করেন, আমি জানি না। একটা কথা বারবার জিজ্ঞেস করার অর্থ আমি বুঝি না।’