ঢাকার রাস্তায় নারী সাইক্লিস্টের সংখ্যা কম কেন?
ঢাকায় গত কয়েকবছরে সাইকেলের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সাইকেল চালানো শেখার হারও বেশ বেড়েছে। আর সাইকেল চালানো শেখা এই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা অনেক।
কিন্তু চালানো শিখলেও, রাস্তায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যাটা খুবই কম।
এই সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে পারিবারিক, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি আমাদের দেশের নারীদের মানসিকতাও দায়ী বলে মনে করেন নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনার সাথে জড়িতরা।
ঢাকায় গত প্রায় চার বছর ধরে নারীদের সাইকেল চালানো শেখানোর কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কানিজ ফাতেমা ছন্দা।
মিজ. ছন্দা জানান গত চার বছরে প্রায় সাড়ে ছয়শো নারী সাইকেল চালানো শিখেছে তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশই শেখার পর রাস্তায় সাইকেল নিয়ে খুব একটা বের হননি।
“আমার স্কুলের মাধ্যমে যারা সাইকেল চালানো শিখেছে, তাদের মধ্যে খুব বেশি হলে ১০ বা ২০ ভাগ নারী নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে সাইকেল চালায়। অধিকাংশই চালানো শেখার পর খুব বেশিদিন চালানোর অভ্যাসটা ধরে রাখেনি।”
মিজ. ছন্দা বলেন অনেক নারীই সাইকেল চালানো শুরু করলেও, নানা কারণে কয়েকদিনের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন।
যেসব কারণে সাইকেল চালান না নারীরা
সেরকম একজন খালেদা নুসরাত – সাইকেল চালানো শিখলেও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে নিয়মিতভাবে সাইকেল চালানোটা যার হয়ে ওঠেনি।
“ঢাকায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা আমার হয়েছে, তা হলো রাস্তার মানুষজন, অন্যান্য গাড়ির চালকরা অতিরিক্ত কৌতুহল নিয়ে আপনার দিকে লক্ষ্য করবে, যা অধিকাংশ সময়ই বেশ অস্বস্তিকর”, বলেন মিজ. নুসরাত।
“একা সাইকেল চালানোর সময় আশেপাশের সাইকেল, মোটর সাইকেল বা রিকশার চালক ও যাত্রীরা অনেকসময় নানা হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন, যা বাংলাদেশে একটা মেয়ের সাথে অন্যান্য সময়ও হয়ে থাকে। কিন্তু সাইকেল চালানোর সময় এরকম হয়রানিমূলক আচরণের কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।”
এছাড়া একা সাইকেল চালানোর সময় প্রায়ই মানুষজনের কটুক্তি শুনতে হয়েছে বলেও জানান মিজ. নুসরাত।
আর ব্যস্ত শহরের সড়কের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টিও নিয়মিত সাইকেল না চালানোর একটি অন্যতম প্রধান কারণ
উৎসাহ নিয়ে সাইকেল চালানো শিখলেও শহরের নারীদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত রাস্তায় সাইকেল না চালানোর কারণ হিসেবে এরকমই কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করেন।
তবে এসবের বাইরে আরো কিছু বিষয় নারীদের রাস্তায় সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে বলে মনে করেন কানিজ ফাতেমা ছন্দা।
মিজ. ছন্দা মনে করেন, পারিবারিক, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি নারীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং নেতিবাচক মানসিকতাও রাস্তায় নারী সাইক্লিস্টের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ।
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও, অনেক নারীই আমাকে বলেছেন যে রোদে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা সাইকেল চালান না।”
মিজ. ছন্দার মতে, নিয়মিত সাইকেলে যাতায়াত করার বিষয়টিকে অনেকেই সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না বলেও অনেক নারী সাইকেল নিয়ে চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
“ব্যবসায়িক কাজে সাইকেল চালিয়ে গ্রাহকদের সাথে দেখা করতে যাওয়ায় ‘কেন সাইকেল চালাই’ এধরণের প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। গাড়ি বা মোটর সাইকেল না চালিয়ে সাইকেল চালানোর কারণে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় – এরকম মানসিকতা পোষণ করেন অনেকেই”, বলেন মিজ. ছন্দা।
আবার নারীদের সাইকেল চালানোর বিষয়টিকে অনেকে রক্ষণশীল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন না করাও একটি অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন মিজ. ছন্দা।
তবে সমাজ বা পরিবারের বাধাকে পাত্তা না দিয়ে, নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে শহরের রাস্তায় নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন এরকম নারীর সংখ্যাও কিন্তু আগের চেয়ে বেড়েছে।
ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হাফসা সেরকমই একজন – রাস্তাঘাটের বিপদ আপদের ভয় বা প্রতিবেশীদের বাঁকা কথা যাকে রাস্তায় সাইকেল নিয়ে নামা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।
“আমি সাইকেল চালাই শুনে প্রতিবেশীরা আমার মা’কে এনিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা বলেছে।”
তবে হাফসার মতে, এধরণের মানসিকতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে নিজের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা চালিয়ে গেলে এক পর্যায়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে শুরু করবেন নারীরা।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন