দেশ কাঁদানো সেই সুমির কথা

সেই মেয়েটি। মনে আছে কার কথা বলছি? নারী দিবস উপলক্ষ্যে জুই নারিকেল তেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে সুমির কান্না। পুরো নাম শাহনাজ সুমি। লম্বা চুল ছোট করতে এক তরুণী পার্লারে যান। বিউটিশিয়ান যত ছোট করেন তিনি শুধু বলেন, আরও ছোট। বিউটিশিয়ান বিস্ময় প্রকাশ করেন। এতো ছোট চুল কেউ করে? শেষে মেয়েটি বলেন, এমনভাবে ছোট করুন যেন, কেউ এটি মুঠো করে ধরতে না পারে। এই সংলাপটিই মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।

কেটে ফেলা চুল কি সত্যি ছিল? সুমি বলেন, আসলে যখন কেউ পুলিশের পোশাক পরে অভিনয় করে তখন আমরা কিন্তু অভিনয়টাকে নয় তাকে পুলিশ হিসেবেই নিয়ে নেই। আমাদের চোখে কিন্তু তিনি পুলিশ হয়ে যান। আমার যখন চুল কেটে ফেলছিলেন বিউটিশিয়ান তখন সেটা প্রকৃত অর্থেই নিয়েছেন দর্শকেরা। কিন্তু অভিনয়ের তো অনেক বিষয় থাকে।

তার মানে চুল সত্য না, সুমি হেসে বলেন, চুল সত্যিকার ছিল না। কিন্তু প্রতিটা কাঁচির শব্দে আমি ফিল করেছি আমার সত্যিকারের চুল কেটে ফেলা হচ্ছে। আমি গল্পের গভীরে ঢুকে গিয়েছিলাম। প্রতি গোছা চুল কেটে ফেলার শব্দে আমি বুক ভাঙা কষ্ট পেয়েছি। অন্তত দর্শকেরা আমার মুখের রেখা দেখে তাই বলেছিলেন।

দেশ কাঁদানো, সারাদেশের মানুষের চোখে জল এনে দেয়া সুমি একজন বাঙালি নারীর চরিত্রে অভিনয় করলেও আসলে এখন টিন এজ পেরোতে এখনো দেরি আছে। এবার মতিঝিল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। পেয়েছেন এ প্লাস। তবে গোল্ডেন হয়নি। বাংলায় শুধু এ প্লাস আসেনি। এটাই আফসোস সুমির। তবে এই আফসোস ভবিষ্যতে রাখতে চান না। ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করবেন এবং অভিনয় বিষয়েই দেশের বাইরে পড়তে যাবেন সুমি। আলাপকালে দৃঢ়তার সাথে জানালেন সুমি।

পরিবারের মেজো মেয়ে তিনি। মেজো মেয়েরা নাকি একটু জেদি, আবেগপ্রবণ, ঝগড়াটে হয়। অন্তত সুমির ক্ষেত্রে তাই হয়। বড় বোন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন। ছোটজন পড়েন সপ্তম শ্রেণিতে। জেদের কারণেই নাচের দিকে ঝুঁকে পড়া। জেদ যেমন খারাপ, তেমনি কিছু তো ভালো দিক আছে। না হলে সারাদেশের মানুষকে তো আবেগে ভাসাতে পারতেন না। যদিও সুমির অভিযোগ সবাই অভিনয়কে চিনেছে, আমাকে চেনেনি।

সুমি আড়াই বছর থেকে ক্ল্যাসিক্যাল নাচ শেখেন। নাচ তার প্যাশন। ২০১৫ সালে ‘সেরা নাচিয়ে’প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দৃষ্টি কাড়েন নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলুর। ২০১৬ সালে পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন। ‘সোনার পাখি রুপার পাখি’ নামের ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে সুমির। প্রথম শোবিজের কাজ এটি। এরপরে নির্মাতা আশুতোষ সুজনের হাত ধরে জুইয়ের বিজ্ঞাপনে সুযোগ। কবি নির্মলেন্দু গুণের মেয়ে মৃত্তিকা গুণ সুমির অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বামী সুজনের নিকট রেফার করেন। এরপর তো ইতিহাস।

এই বিজ্ঞাপনের জন্য বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসায় আমি অভিভূত হয়েছি। ভিডিওটি প্রকাশিত ৬ মার্চ। ৭ মার্চ থেকে আমি প্রচুর মেসেজ পেতে থাকি। আমার অনেক প্রিয় মানুষদের প্রশংসা বাক্য লেখা মেসেজ পেয়েছি। বিশেষ করে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাই যখন লিখলেন তখন দ্বিতীয় দফা প্রশংসার ঢেউ এসে লাগলো। উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু নিউজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ এইটিন, এনডিটিভিসহ বিশ্বের বহু গণমাধ্যমে সুমির বিজ্ঞাপন সম্পর্কে লেখা হয়।

সুমি এখন কলেজে ভর্তির অপেক্ষায় রয়েছেন। এরইমধ্যে রমজানে ফের একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। রমজানের বার্তাবাহক বিজ্ঞাপনটি ফ্রেশ ড্রিংকিং ওয়াটারের। সম্প্রতি অভিনয় করেছেন একটি টেলিফিল্মে। রাজীব হাসানের পরিচালনায় ‘ওপারে বসন্ত’ টেলিফিল্মটি প্রচারিত হবে আসন্ন ঈদে। তবে এই ঈদে সুমির একটি স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে। কী সেই স্বপ্ন? সুমি কালের কণ্ঠকে বলেন, আবুল হায়াত একজন গুণী অভিনেতা। আমার স্বপ্ন ছিল তার সাথে কাজ করার। এবার ঈদে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। তার পরিচালনায় একটি নাটকে আমি কাজ করছি।

সুমির একটা গোপন ও তীব্র ইচ্ছা আছে। বলা যায় এটাও জেদও। সুমি সহজে কাউকে বলতে চান না ইচ্ছাটা। বলবেন না, বলবেন করতে করতেও বলে ফেললেন, ‘অভিনয় দিয়ে জাতীয় পুরস্কার জয় করতে চাই।’-কালের কণ্ঠ