নওগাঁর রাণীনগরে পরকীয়া প্রেমিককে অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দিল মাতবররা

নওগাঁর রাণীনগরে পরকীয়া প্রেমে জড়িত বোরকা পড়া হুজুরকে অর্থের বিনিময়ে গ্রাম্য মাতবররা ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কনৌজ গ্রামে। আইনের আশ্রয়ে তুলে না দিয়ে অর্থের বিনিময়ে এমন ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ায় বাসিন্দাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (২৭ মে) বিকেলে সরেজমিনে কনৌজগ্রামে গিয়ে জানা যায়, সিংড়া উপজেলার কাওছার নামের এক হাফেজ কনৌজ মাদ্রাসায় চাকরীর অজুহাতে গ্রামের মসজিদে গত বছর তারাবির নামায আদায় করার সুবাদে গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে অবস্থান করে। এসময় হুজুর ওই মহল্লার মহিলাদের সহীহ কুরআন শরীফ শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। এর বেশ কিছু দিন পর হুজুরের আচরন খারাপ মনে হলে ওই বাড়ি থেকে তাকে বের করে দিলে সে গ্রামের অন্য একজনের বাড়িতে অবস্থান নেয়।

এর মধ্যে ওই গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে আব্দুল আলীমের এক সন্তানের জননী সুন্দরী গৃহবধূর সঙ্গে হুজুরের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর আগে হুজুরের প্রেমে পড়ে ওই গ্রামের অন্য এক গৃহবধূ স্বামীকে তালাক দিয়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গৃহবধুর স্বামী আব্দুল আলীম ঢাকায় থাকায় দিনের পর দিন মোবাইলের মাধ্যমে জমতে থাকে তাদের প্রেমের সম্পর্ক।

এর ফাঁকে একদিন ঐ গৃহবধূ ওই হুজুরকে বোরকা পড়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসলে গ্রামবাসী বিষয়টি টের পেয়ে ঐ গৃহবধূ বাড়িতে গেলে ঐ গৃহবধূ হুজুরকে গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২৫ মে) রাত আনুমানিক ৮টার পর বোরকা পড়া হুজুরের সঙ্গে গৃহবধূ পালানোর সময় গ্রামবাসী তাদেরকে আটক করে। মুহুর্ত্বের মধ্যে বিষয়টি পুরো গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে বিষয়টি জানার পর ঐ গৃহবধূর স্বামী আব্দুল আলীম ঢাকা যাওয়ার অর্ধেক পথ থেকে বাড়িতে ফিরে আসলে ওই গ্রামের মাতবর আ’লীগ নেতা শহীদুল ইসলাম ও আব্দুল আলীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তসলিম লোকজন নিয়ে এসে রাত আনুমানিক ১২টার পর গোপনে হুজুরকে উদ্ধার করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এমন ঘটনায় বখাটে হুজুরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে গোপনে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি গ্রামবাসীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

গ্রাম্য মাতবর শহীদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান হুজুরের বিষয়ে আমাকে জানালে ওই রাতেই আব্দুল আলীমের পরিবারের সম্মতিতে হুজুরকে উত্তম-মধ্যম শাসন করে ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকার বিনিময়ে হুজুরকে তারা ছেড়ে দিয়েছেন কিনা এমন বিষয়টি শহীদুল ইসলাম এড়িয়ে যান। আব্দুল আলীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তসলিম মোবাইল ফোনে জানান আব্দুল আলীম বিষয়টি ফোনে তাকে জানালে ওই রাতেই তসলিম একাধিক লোকজন নিয়ে সেখানে গিয়ে হুজুরকে গ্রামবাসীর প্রহার থেকে বাঁচিয়ে নেন।

এরপর সম্মান রক্ষার্থে আব্দুল আলীম ও তার পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে মাতবর শহীদুলের পরামর্শে হুজুরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ওই রাতেই তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মমতাজ হোসেন বলেন রবিবার সকালে বিষয়টি আমি জানার পর কনৌজ গ্রামে গিয়ে দেখি বিষয়টি তারা রাতেই মিটমাট করে ফেলেছে। তবে এমন ঘটনায় অবশ্যই স্থানীয়দের উচিত ছিলো এমন লম্পট হুজুরকে আইনের আশ্রয়ে তুলে দেওয়া।

বিষয়টি সম্পর্কে আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি আমরা সমাধান করেছি। কি বিষয়টি তারা সমাধান করেছেন সেই বিষয়টি জানতে চাইলে আব্দুল আলীমের বড় ভাই ও মা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এই বিষয়ে তারা আর কোন কথা বলেননি।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ জানান এমন বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। কিন্তু কেউ কোন অভিযোগ প্রদান করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।