প্রতি কেজিতে ৩-৪ টাকা লোকসান

নওগাঁয় লোকসান কাঁধে নিয়েই সরকারী খাদ্যগুদামে চাল দিতে চুক্তি মিলারদের

ব্যবসার লাইসেন্স বাঁচাতে লোকসানের ভার কাঁধে নিয়ে নওগাঁর রাণীনগরে সরকারী খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে চুক্তি করেছেন মিলাররা।

নির্ধারিত সময় ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১মিলারের মধ্যে ৩৮জন মিলার চুক্তিবন্ধ হয়েছেন। তারা বলছেন,ধান উৎপাদনে খরচ বাড়লেও সরকারীভাবে চালের তেমন দর বাড়ানো হয়নি। ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩থেকে ৪টাকা করে লোকসান হবে। এর আগে গত ইরি বোরো মৌসুমে চাল সরবরাহে চুক্তিতে না আসায় এবং বিভিন্ন অনিয়মের কারনে ৪৯জন মিলারকে চলতি মৌসুমে কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

রাণীনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ৫১ মিলারের বিপরীতে ৮৫৩ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। গত ১৭নভেম্বর থেকে চাল সরবরাহে চুক্তি শুরু হলেও ৮ডিসেম্বর পর্যন্ত তেমন সারা মেলেনি। ফলে নতুন করে আরো ৭দিন বাড়িয়ে ১৫ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। কার্যালয় সুত্র আরো জানায়,উপজেলায় ১০০জন মিলার ছিল। গত ইরি বোরো মৌসুমে ৫১জন মিলার চুক্তি করে চাল সরবরাহ করেন। ওই সময় চাল সরবরাহে চুক্তিতে না আসায় এবং শর্ত ভঙ্গসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারনে ৪৯জন মিলারের বরাদ্দ স্থগিত করে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

রাহেমা চাউল কল মিল মালিক লুৎফর রহমান বলেন,গত ইরি মৌসুমে চাল সরবরাহে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে একইভাবে লোকসান হচ্ছে। চলতি মৌসুমে চাল সরবরাহ করলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩-৪ টাকা করে লোকসান হবে। এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়,তাই এবার আর চাল সরবরাহ করতে সরকারের সাথে চুক্তি করিনি।

উপজেলার কুজাইল বাজারের কাজী রাজিব চাউল কল মিল মালিক আশিক আহম্মেদ বলেন,দীর্ঘ দিন থেকে ধান-চালের ব্যবসা করে আসছি। চলতি মৌসুমে সরকার আমাকে চালের বরাদ্দ দিয়েছে ৯.৩৯০মেট্রিকটন। তিনি বলছেন,বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহে এই মৌসুমে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা লোকসান হবে। তার পরেও সরকারকে সহযোগিতা করতে এবং ব্যবসার লাইসেন্স টিকে রাখতে বাধ্য হয়ে লোকসান কাঁধে নিয়ে চাল সরবরাহ করতে চুক্তি করেছি।

উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিতানাথ ঘোষ বলেন,ধান উৎপাদনে প্রতিটি পন্যের দর বাড়লেও সরকারীভাবে তেমন দর বাড়ানো হয়নি। প্রতি কেজি ধান ক্রয় থেকে শুরু করে সিদ্ধ-সুখান এবং চাল বের করা পর্যন্ত প্রায় ৪৫ থেকে ৪৬টাকা খরচ পরে যায়। ফলে প্রতি কেজিতে ৩-৪ টাকা লোকসান হবে। তার পরেও ব্যবসার লাইসেন্স টিকাতে হাজার হাজার টাকা লোকসান মেনে নিয়ে মিলাররা চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন। তবে মিলারদের বাঁচাতে আমরা ইতি মধ্যে চালের দর পূন:বিবেচনার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশাকরছি সরকার সেটি বিবেচনা করবেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো: ওবায়দুল ইসলাম বলেন,নির্ধারিত সময়ে ১৫ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১জন মিলারের মধ্যে ৩৮জন মিলার চাল সরবরাহে চুক্তি করেছেন। এছাড়া অবশিষ্ট ১৩জন মিলার চুক্তি করেননি। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।