নতুন ইতিহাস রচনা করবেন কিম জং উন

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরীয় সরকারের ঊচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন বলেছেন তিনি জাতীয় পুনর্গঠনে নতুন ইতিহাস রচনা করতে চান। সোমবার পিয়ংইয়ংয়ে দু’দেশের ঊচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে নজিরবিহীন এক বৈঠকের পর নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেন কিম জং উন। খবর সিএনএন।

কিম জং উনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের নৈশভোজ ও বৈঠকের ছবি ও বক্তব্য প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ)। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান চুং ইউই ইয়ংও ছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার তরফ থেকেও ওই বৈঠকের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, দু’দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়েছে। সোমবারের ওই বৈঠকে কিমের স্ত্রী রি সোল জু এবং তার বোন কিম ইয়ো জংও উপস্থিত ছিলেন।

২০১১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর নিজের কর্মকর্তাদের নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি এটাই কিম জং উনের প্রথম বৈঠক। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমবারের মতো তাদের কোনো প্রতিনিধি দল কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধান ভবনে পা রাখল।

দু’দেশের ঊচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের এই সাক্ষাতকে মুক্তমনা আলোচনা বলে উল্লেখ করেছে কেসিএনএ। এই বৈঠকের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ফলে কোরীয় দ্বীপে শান্তি ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।

কেসিএনএর খবরে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দলটি দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা ইন-এর একটি ব্যক্তিগত চিঠি কিমের কাছে হস্তান্তর করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দেশটিতে সফর করেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং। এরপর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশটিতে সফর করেন উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী জেনারেল কিম ইয়ং চোল। তার সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা ইন। এরপরেই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

ক্ষমতা গ্রহণের পরই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যা ইন।

নিজেদের পরমাণু কর্মসূচির কারণে বহুদিন ধরেই জাতিসংঘ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে উত্তর কোরিয়া। গত বছরও বেশ কয়েকবার ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। ফলে কোরীয় দ্বীপে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে দু’দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

ইয়োনসেই ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন সব সময়ই তার চারপাশে একটি বেষ্টনী তৈরি করে রাখেন। প্রায় ছয় বছর ধরে উত্তর কোরিয়ার বাইরের অনেক লোকজনই কিমকে দেখেননি। সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠক একটি বিরল ঘটনা।

এর আগে ২০১৭ সালে এক রাষ্ট্রদূতকে উত্তর কোরিয়ায় পাঠিয়েছিল চীন। কিন্তু তার সঙ্গে সাক্ষাত করেননি কিম। এমনকি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের সাবেক পরিচালক জেমস ক্লেপারের সঙ্গেও দেখা করেননি। চার বছর আগে পিয়ংইয়ংয়ে বিরল সফর করেন জেমস ক্লেপার।

যুক্তরাষ্ট্র বহুবারই বলেছে তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু উত্তর কোরিয়া যদি তাদের পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধের অঙ্গীকার করে তবেই তারা আলোচনায় যেতে রাজি আছে বলে শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার কোনো সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি।