নরসিংদীর সাত যুবক নিখোঁজ হয়েছে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে

ইতালীয় দ্বীপ ল্যাম্পেডুসার কাছে ট্রলার ডুবে হতাহতের ঘটনায় ঘটনায় নরসিংদীর সাতজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। নিখোঁজরা সবাই দালালের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

বুধবার ভূমধ্যসাগরে ওই ট্রলার ডুবে ৪১ অভিবাসীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। আর নরসিংদীর যে যুবকরা নিখোঁজ রয়েছেন তারা প্রত্যেকেই জেলার বেলাব উপজেলার বাসিন্দা।

নিখোঁজ কামাল মিয়ার ছোট ভাই জামাল মিয়া শুক্রবার বলেন, স্থানীয় দালালরা কয়েকমাস আগে আমার ভাইকে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালির উদ্দেশ্য প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন গেম ঘরে রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় নৌকার তুলে ইতালির পথে যাত্রা করে। এর ৪০ মিনিট পর ট্রলার ডুবে যায়।

তিনি বলেন, ট্রলার ডুবে আটজন নিখোঁজ হয়েছে- এ তথ্য দালাল জাকির হোসেন স্থানীয় মিলন মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছে। এই আটজনের মধ্যে আমার ভাইও রয়েছেন।

বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে এবং লোক মুখে শুনেছি। এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, নিখোঁজের সংবাদ লোক মুখে শুনেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। নিখোঁজের বিষয় জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।

নরসিংদীর নিখোঁজরা হলেন- কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন কামাল (৩৪), ভাটের চর গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০) এবং নিলক্ষিয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১)।

নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দুলালকান্দি গ্রামের জাকির হোসেন এবং তার ফুফু শাহিনুরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ওই যুবকেরা দেশ ছাড়েন। ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ওই দালালরা মোটা অঙ্কের টাকা নেয়।

নিখোঁজ রবিউলের ভাই ইব্রাহিম বলেন, জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এখন আমার ভাই নিখোঁজ।

রবিউলের স্ত্রী সাথি আক্তার বলেন, ১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সাথে কথা হয়েছিল। বুধবার ডেঙ্গিতে (নৌকা) তুলবে। তারপর থেকে আর কোন যোগাযোগ করতে পারেনি।

দুলালকান্দি গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মেম্বার বলেন, আমি খবর পেয়ে জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ফোন দিলে অন্য একজন আমাকে জানান, জাকির হোসেনের অধীনে ২০ জন গিয়েছিল। এদের মধ্যে ১২ জনকে উদ্ধার করা হলে আটজনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এদিকে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নিখোঁজ হওয়ার খবরে দালাল জাকির হোসেন ও শাহিনুরের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে।