নাশকতা ঠেকাতে শোকের দিনে কড়া নিরাপত্তা

আগস্ট মাস মানেই বাঙালির শোক, বেদনা ও ষড়যন্ত্রের মাস। ১৯৭৫ সালের এই মাসের ১৫ তারিখে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অকল্পনীয় নির্মমতায় সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বিদেশে থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পঁচাত্তরের আগস্টেই সব ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। জামায়াত-বিএনপির শাসনামলে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে। সে হামলায়ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে রক্ষা পান। তবে নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন।

তাতেও শেষ হয়নি ষড়যন্ত্র। পরের বছর ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩টি জেলার ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি।

সবশেষ ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শোক দিবসের মিছিলে আত্মঘাতীর পরিকল্পনা করে নব্য জেএমবি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ওই পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়। হামলা চালাতে আসা জঙ্গি সাইফুল ইসলাম অবস্থান নিয়েছিল পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে। ১৪ আগস্ট ওই হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ, তখন আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গি সাইফুল।

তাই সব ধরনের আশঙ্কা মাথায় রেখেই এবার জাতীয় শোক দিবসে রাজধানীসহ সারা দেশে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে দীর্ঘ এক সপ্তাহ ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মেসগুলোতে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায়ও ধানমন্ডি, সোবহানবাগ, কলাবাগান, নাখালপাড়া, রাজাবাজার ও ৩২ নম্বর এলাকায় ব্লক রেইড চালায় পুলিশ। এসব এলাকার বিভিন্ন হোটেলে থাকা বর্ডারদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। আর মঙ্গলবার দুপুর থেকে এখানকার ফুটপাতে কোনও হকার বসতে দেয়া হয়নি।

সারা দেশে মনিটরিং সেল, পাড়া-মহল্লার ভোজেও নিরাপত্তা

শোক দিবসের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শোক দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুলিশ সজাগ থাকবে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ দিন সারা দেশ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে। মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট, ব্লক রেইডসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পাড়ায়-মহল্লায় যে সকল সামাজিক অনুষ্ঠান ও ভোজের আয়োজন করা হয় সেখানেও মনিটরিং সেল করা হবে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কড়া নিরাপত্তা

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শোক দিবসকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তারপরও সার্বিক বিষয় বিবেচনায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও আমরা আমরা কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দিচ্ছি না। তাই সারা শহরে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও আশেপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে।

নিরাপত্তার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, শোক দিবসের দিন ধানমন্ডিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সব মানুষকে প্রবেশপথে আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে তল্লাশির মাধ্যমে সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে হবে। ধানমন্ডি ৩২ ও বনানী কবরস্থান এলাকায় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে এবং ডিএমপি ও র‍্যাবের ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে সুইপিং করা হবে। ৩২ নম্বরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হবে।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ওই দিন যারা শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন, তারা কেউ হ্যান্ডব্যাগ, ভেনিটিব্যাগ, ব্যাকপ্যাক, দাহ্য পদার্থ, ছুরি-কাঁচি বহন করতে পারবেন না। চারপাশ দিয়ে প্রবেশের সময় তল্লাশি করা হবে, আবার অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের সময় আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় এসএসএফ দায়িত্ব পালন করবে।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর উন্মুক্ত হবে ৩২ নম্বর

ডিএমপি কমিশনার জানান, ১৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুস্পার্ঘ অর্পণ করবেন। তারপরই সর্বসাধারণের জন্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। সবাই রাসেল স্কয়ার দিয়ে প্রবেশ করে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর পশ্চিম পাশ দিয়ে বের হয়ে যাবেন।

ভিভিআইপি মুভমেন্টের সময় সোনারগাঁও ক্রসিং থেকে রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ২৭ থেকে রাসেল স্কয়ার, সিটি কলেজ থেকে রাসেল স্কয়ার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও জানান আছাদুজ্জামান মিয়া।