নিজেকে ‘দেবতা’ দাবি করে ধর্ষণ করতেন রাম রহিম

নিজেকে দেবতা দাবি করে তার সেবায় নিয়োজিত নারীদের ধর্ষণ করতেন ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমেত রাম রহিম সিং।

যে দুই নারী রাম রহিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন, তাদের লিখিত জবানবন্দিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন।

ধর্ষণের প্রায় ১০ বছর পর রাম রহিমের দুই সেবিকার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয় ২০০৯ ও ২০১০ সালে। মূলত এ দুজনের নির্যাতিত হওয়ার বয়ান রেকর্ড হওয়ার মধ্য দিয়ে বিতর্কিত ধর্মগুরুর সাজার ভাগ্য নির্ধারিত হয়।

ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) বিচারকদের সামনে দুই নারীর জবানবন্দির যে নথি হাজির করা হয়েছে, তাতে অভিযোগের ধারাবাহিক বর্ণনা রয়েছে। গোপন আস্তানায় ধর্মগুরু রাম রহিম কীভাবে তার সেবিকাদের ধর্ষণ করেন, তার রোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে এতে।

জবানবন্দির তথ্য অনুযায়ী ধর্ষণের শিকার দুই নারী অভিযোগ করেছেন, গুরমেত রাম রহিম সিং যখন ধর্ষণ করতেন, তখন তিনি নিজেকে দেবতা বলে দাবি করতেন এবং দেবতার মর্যাদায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করার চেষ্টা করতেন। এ ছাড়া রাম রহিমের ধর্ষণকাণ্ডকে তার ভক্তরা ‘মাফি’ (ক্ষমা) বলে অভিহিত করতেন। শুধু নারী ভক্তদের তার সেবায় নিয়োজিত করা হতো। তা ছাড়া তার গোপন আস্তানার পাহারায় শুধু নারীদেরই নিয়োজিত করা হতো।

নিজের গোপন ডেরায় আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে নারীদের সম্মোহিত করার চেষ্টা করতেন রাম রহিম। এ ছাড়া যে ব্যক্তিরা তার আধ্যাত্মিক শক্তিতে বিশ্বাস করতেন, তাদের পরিবারের নারীরাও তার সেবায় নিয়োজিত হতেন।

হারিয়ানা রাজ্যের যমুনানগরের যে নারী রাম রহিমের ধর্ষণের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের বিচারক এ কে ভার্মার সামনে তার জবানবন্দি দেন, তিনি জানিয়েছেন, ভক্ত ভাইয়ের কারণে ১৯৯৯ সালে রাম রহিমের সেবায় নিয়োজিত হন তিনি। তার ভাই গুরুর অন্ধভক্ত ছিলেন। কিন্তু ধর্ষণের পর তার বোনের পক্ষে বিচার চাওয়ায় তাকে খুন করা হয় বলে দাবি করেন ওই নারী।

ধর্ষণের শিকার হরিয়ানার এই নারী আরো জানান, অন্য সেবিকারা যখন তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি ‘গুরুর মাফি’ চান কিনা, তিনি তখন বুঝে উঠতে পারতেন না, তারা আসলে কী বলতে চাইছেন। ১৯৯৯ সালের ২৯/২৯ আগস্ট যখন তাকে গুফায় (গোপন আস্তানা) ডাকা হলো এবং ধর্ষণ করা হলো, তখন তিনি গুরুর মাফি সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেন।

এই মামলার আরেক সেবিকার বয়ান থেকে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে গুরুর আস্তানায় যোগ দেন তিনি। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একদিন আস্তানা পাহারা দেওয়ার সময় তাকে গুফায় ডাকা হয় এবং গুরুর হাতে ধর্ষণের শিকার হন। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি সিবিআইয়ের সামনে জবানবন্দি দেন।