পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শহীদ মিনার নেই ৮৯ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলার ১১৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৯টিতেই শহীদ মিনার নেই। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে স্বীকৃত হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারছে না।

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দিনটি পালনের নির্দেশনা থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে পালন করে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই দেখা যায়, শহীদ মিনার না থাকায় অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ দিবসটিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষকরা ছুটি ভোগ করেন। তেঁতুলিয়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাত্র কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার ঘোষিত কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার না থাকায় তাঁরা ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারে না।

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৫টি কলেজ, ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১১টি মাদ্রাসা (তন্মধ্যে ২টি ফাযিল মাদ্রাসা) বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে তেঁতুলিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ, ভজনপুর ডিগ্রি কলেজ, কালান্দিগঞ্জ ফাযিল মাদ্রসা, সিপাইপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, সিপাইপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফকিরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, শালবাহান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তেঁতুলিয়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, রনচন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিজনগড় উচ্চ বিদ্যালয়, শালবাহান উচ্চ বিদ্যালয়, ভি.পি উচ্চ বিদ্যালয়, মাঝিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, হারাদিঘী দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়, গিতালগছ উচ্চ বিদ্যালয়, বেগম খালেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দেবনগড় দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়, আমজুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়, বোদা ময়নাগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, ভজনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলাবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধাইজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রওশনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১, খয়খাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাথাফাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

তেঁতুলিয়া উপজেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৪ এর মধ্যে শুধু ৭টিতে শহীদ মিনার আছে। মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬ এর মধ্যে ১৭টিতে শহীদ মিনার আছে, মোট ১১টি মাদ্রাসার মধ্যে শুধু ১টিতে শহীদ মিনার আছে এবং ৫টি কলেজের মধ্যে শুধু ২টিতে শহীদ মিনার আছে বলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় শাখার সভাপতি ও আমজুয়ানী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওমর আলী জানান, ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অথচ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। আজকে ছাত্র ছাত্রীরা কথায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন, কিভাবে সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলোনের কথা স্মরণ করবেন এমনটি বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। তবে আমাদের (স্কুলের শিক্ষকদের) উচিত সবাই সম্মেলিতভাবে ভাষা শহীদদের কথা স্মরণে নিজেদের উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা করা। তিনি আরোও বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এবং উপজেলা প্রশাসন মহোদয়ের সহযোগিতায় যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো শহীদ মিনার হয়নি তা অচিরেই স্থাপনা করার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে আয়ুব উল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রেজাউল হক বলেন, আমরা কলা গাছের শহীদ মিনার নির্মাণে মামলা খেয়েছি তবুও এখন পর্যন্ত কোন শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যবস্থা হয়নি। সেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলোনের কথা স্মরণে একটি শহীদ মিনারসহ স্কুলের বাউন্ডারী ওয়াল চেয়ে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের দৃষ্টি কামনা করেছেন।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনাায় উদ্বুদ্ধ করতে শহীদ মিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গভীর শ্রদ্ধাভরে যদি দিবসটি পালন করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা দেশের স্বাধীনতার চেতনার মুল্যবোধে জাগ্রত হবে। শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাপ্ত পত্র পেয়েছিলেন যাতে নতুন আঙ্গিকে এবং আদর্শ অবকাঠামোতে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে নির্দেশনা ছিল তবে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি।

শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সুস্পষ্ট নির্দেশনা পেলেই যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে কাজ করার চেষ্টা করবেন। তাছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই ওইসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যদি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়া হয় তাহলে খুবই ভাল হতো। কেননা এসব এলাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব অর্থায়নে শহীদ মিনার নির্মাণ করার সামর্থ্য নেই। যেহেতু শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তবে আমরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান) এর সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছি।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইউনুস আলী জানান, উপজেলায় ৭৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এককভাবে ৭টিতে শহীদ মিনার রয়েছেন। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের শহীদ মিনার তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি সেগুলোতে সরকারিভাবেই শহীদ মিনার করা হবে। প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষার অর্জন-ইতিহাস উপস্থাপন করার জন্য অবশ্যই শহীদ মিনার নির্মাণ করা জরুরি।

আর যেসব এমপিও ভুক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চাহিদা দিলে সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।