পটুয়াখালীর রাস্তার পাশেই সাজানো ইফতার, নিতে পারেন যে কেউ

পটুয়াখালী শহরের প্রবেশদ্বার চৌরাস্তা থেকে এক হাজার গজ দূরে সোনালী ব্যাংক চৌরাস্তা মোড়। সোনালী ব্যাংকের এ মোড় থেকে সার্কিট পর্যন্ত বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিনের একক প্রচেষ্টায় একটি দৃষ্টিনন্দন ফোরলেন নির্মাণাধীন রয়েছে। রোজার তৃতীয় দিন থেকে ফোরলেনের পাশে আসরের নামাজের পর সারিবদ্ধভাবে সড়কে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইফতারের প্যাকেট ও পানির বোতল।

রোজাদার দরিদ্র, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া মানুষেরা আসছেন এবং নিজেই হাতে তুলে নিচ্ছেন ইফতারি। যারা ইফতারি নিচ্ছেন তাদের কারো ছবি তোলা হয় না। ইফতার বিতরণের এ ব্যতিক্রমী চলার পথে তৃপ্তির ইফতার হাতে পেয়ে অনেকের মুখেই ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। এ সময় দুহাত ভরে দোয়া করেন আয়োজকদের জন্য।

এ রকম ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখে যেমন খুশি উপকারভোগীরা, তেমনি আলোচনা ও প্রশংসায় ভাসছে সংগঠনটির সদস্যরা। আয়োজন ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রসংশা কুড়িয়েছে।

মহামারীতে থমকে আছে দেশ, রমজান মাসের প্রথম দিন থেকেই লকডাউন চলছে দেশে। এর ফলে কষ্টে আছে নিম্নবিত্তরা। এ সকল দরিদ্র মানুষদের মাঝে ১৬ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন পটুয়াখালী জেলা শহরে ‘পটুয়াখালীবাসী’ সংগঠনটি ৫০ জন রোজাদার অসহায় ব্যক্তিকে এভাবেই ব্যতিক্রমীভাবে ইফতার বিতরণ করে যাচ্ছেন। যেখানে প্রতি প্যাকেটে রয়েছে মুড়ি, বুট, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর এবং সাথে খাবার পানির একটি বোতল।

সাধারণত দেখা যায় ইফতার বিতরণ কর্মসূচিতে যারা ইফতার দিচ্ছেন এবং যারা নিচ্ছেন তাদের ছবি তুলতে। কিন্তু এখানেই ভিন্নতা দেখা গেছে ওই আয়োজনে। এখানে, কে নিচ্ছেন তাদের কারো ছবি তোলা হয় না।

গত চার দিন ধরে ইফতারি দেয়া হচ্ছে। রোববার বিকেল ৫টার দিকে দেখা যায় ৫০টি প্যাকেট তৈরির কাজ শুরু করে সংগঠনের সদস্যরা। পরে সার্কিট হাউজের সামনের সড়কে ইফতারির প্যাকেট সাজিয়ে দেয়া হয়। ওই রাস্তা দিয়ে রিকশাচালক গেলে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় রোজা আছেন কিনা। রোজা থাকলে এক প্যাকেট ইফতার ও একটি পানির বোতল নিয়ে যান।

রিকশাচালক রহিম বলেন, আমার রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় হয় তাতে ভালো ইফতারি কিনে ইফতার করতে পারি না। গত বছরগুলোতে বিভিন্ন মসজিদে ইফতার করতাম। এ বছর করোনার কারণে মসজিদে মানুষে ইফতারি দেয় না, হোটেলও বন্ধ। যারা এই আয়োজন করছে তাদের জন্য ইফতারি করে দোয়া করবো।

পটুয়াখালীবাসী নামক সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ইফতার বিতরণে দেখা গেছে এ ভিন্নতা। রমজানের শুরু থেকে নিয়মিত ইফতার ও পানি বিতরণ করতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অনুদানই তাদের একমাত্র ভরসা। সংগঠনটির সদস্যরা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে ইফতার সামগ্রী ক্রয় করে নিজেরাই প্যাকেট করেন। আসরের নামাজের পর এক এক দিন এক এক স্থানে রাস্তার পাশে তৃপ্তির ইফতার সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

এ ব্যতিক্রমী আয়োজনে সংগঠনটিকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশার মানুষ।

‘পটুয়াখালীবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান রায়হান বলেন, পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দেশের যেকোনো দুর্যোগ মুহূর্তে আমরা স্বেচ্ছায় কাজ করে থাকি। পটুয়াখালী জেলার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নিজস্ব কোনো অফিস না থাকলেও আমরা উন্মুক্ত অবস্থায় আলোচনা করে তারপর অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াই।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমরা এই কাজ করতেছি, নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমানো অর্থ ও পটুয়াখালী জেলার বিত্তবানদের সহযোগিতায় এই স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

করোনার এই বিরূপ পরিস্থিতিতে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে সাধ আর সাধ্যের মিল করে অনেকেই ইফতার তৈরি করতে পারছেন না অথবা কিনতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় বিত্তবানদের সহযোগিতায় আমরা ইফতার দেয়ার এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি।

তিনি বলেন, মানুষের সহযোগিতা পেলে পুরো রমজান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ব্যতিক্রমী বিভিন্ন আয়োাজন থাকবে।