পাকিস্তান-চীন যৌথ বিমান মহড়া : ভারতকে বার্তা?

পাকিস্তান ও চীন যৌথ বিমান মহড়া শুরু করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ চীন সফর করার সময় এই যৌথ মহড়া হচ্ছে।

প্রশিক্ষণমূলক এই যৌথ বিমান মহড়ায় অংশ নিচ্ছে চীনের জি-১১, জি এইচ-৭ বোমারু বিমান এবং কে.জি-২০০ অ্যাওয়াক্স সামরিক বিমানসহ নানা ধরনের জঙ্গি বিমান। এ ছাড়াও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য নানা ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটও এই মহড়ায় ব্যবহার করছে বেইজিং।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সাম্প্রতিক টানাপড়েন ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে চীন ও পাকিস্তান উভয়ের জন্যই এই যৌথ বিমান মহড়া খুবই সময়োপযোগী এবং মার্কিন মোড়লিপনার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শনীর বেশ মোক্ষম সুযোগ। এটা প্রতিবেশী ভারতের জন্যও একটি বিশেষ বার্তা।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদ অব্যাহত থাকার বিষয়ে পাকিস্তানকে দোষারোপ করে বলেছেন, পাক সরকার সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়া অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন কংগ্রেস ও সামরিক বিভাগ এরই আলোকে পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে।

পাকিস্তান মার্কিন সরকারের এই অবস্থানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সম্প্রতি পাক সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে ওয়াশিংটনকে এটা বোঝাতে চাইছে যে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে পাকিস্তানের হাত অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং দেশটি পুরোপুরি মার্কিন সাহায্য-নির্ভর নয়।

অন্যদিকে উত্তর কোরিয়াসহ নানা ইস্যুতে চীন-মার্কিন বিরোধের প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি চীনও পাকিস্তানকে সমর্থন জানিয়ে শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।

মার্কিন সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের প্রেক্ষাপটে পাক-চীন ঘনিষ্ঠতা ক্রমেই বাড়তে থাকায় জিবা ফারজিন নিয়ার মত বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান এতকাল ধরে মার্কিন সরকারের কাছ থেকে যেসব সুবিধা বা ছাড় আদায় করত এখন তা চীনের কাছ থেকে পাওয়ার চেষ্টা করছে।

ওয়াশিংটন কোরিয়া সংকটের বিষয়ে পিয়ংইয়েংর ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায় চীনের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের ইচ্ছাগুলো চীনের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টায় ও চীনের চারদিকে মার্কিন সেনা সমাবেশে ক্ষুব্ধ হয়ে আছে বেইজিং। তাই এ অবস্থায় পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে শক্তি দেখানোর সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে চীন।

চীনের সক্রিয় সেনা সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। বিশ্বে সামরিক বাজেটের দিক থেকে আমেরিকার পরই রয়েছে দেশটির স্থান। দেশটির সামরিক বাজেটের পরিমাণ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। বিমানবাহী রণতরী ও নৌ-শক্তির দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনের নৌবাহিনী। ট্যাংকের সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি। আর এ অঞ্চলে সামরিক দিক থেকে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে চীন।

এ অবস্থায় পরমাণু শক্তিধর চীন ও পাকিস্তানের জোটবদ্ধতা মার্কিন সরকারের কাছে ভালো লাগার কথা নয়। অবশ্য চীন খুব কঠিন অবস্থায় পাকিস্তানের জন্য বড় রকমের মূল্য দেবে কিনা তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। কারণ আফগানিস্তানে পাকিস্তানের স্বার্থ চীনের চেয়েও মার্কিন সরকারের স্বার্থের সুতোর সঙ্গেই বেশি মাত্রায় জড়িয়ে আছে। তাই পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহল বিদেশি চাপগুলোর মোকাবেলায় জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর হওয়ার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে।

পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন চীনেরপাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন চীনের

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কিছু কথা হয়েছিল। তার জের ধরে ভারতীয় মিডিয়ায় জোরেসোরে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এখন চীনও সোচ্চার। কিন্তু চীন আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিল, তা উপলব্ধি করতে পারেনি তারা।
চীন এবার স্পষ্টভাবে পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দিয়ে জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের আত্মত্যাগ ভোলার নয়।

শুক্রবার বেইজিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখান ওয়াং জানান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অবস্থানকে চীন পুরোপুরি সমর্থন করে। পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন সবরকম ভাবে পাশে থাকবে। প্রতিবেশীর দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
পাশাপাশি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পাকিস্তানের উন্নয়নে চীন আগের মতো ইতিবাচক ভূমিকা নেবে।

চীনের এই অবস্থান বদল নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাদের ভাষায়, কয়েক দিন আগে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলি যে ঘোষণাপত্রটি প্রকাশ করেছিল তাতে কড়া হাতে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার কথা বলা হয়ে। লস্কর-ই-তৈইবা, জইশ-ই-মোহাম্মদের মতো পাকিস্তানি মদতপ্রাপ্ত সংগঠনগুলির নামও ছিল ওই ঘোষণায়। ব্রিকসের এই ঘোষণাপত্র পাকিস্তানের কাছে বড় ধাক্কা ছিল। ব্রিকসের মতে চীন সঙ্গ দেয়ায় অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। এর জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ধাক্কা খাবে বলে মনে করেছিলেন ভারতীয় পক্ষের কেউ কেউ। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, পাকিস্তানের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক এখনই একইরকম রয়েছে চীনের। ব্রিকস সম্মেলন সন্ত্রাস নিয়ে চীনের অবস্থান স্রেফ যে কথার কথা তা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে গেল।