মানিকগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

সিংগাইরে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ

তফসিল অনুযায়ী আগামী ৮ মে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এখানে চেয়ারম্যান পদে তিন জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দু’জনই বর্তমান সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর আস্থাভাজন । এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার- প্রচারণা তুঙ্গে। ক্রমশই পরিবেশ হয়ে ওঠছে উত্তপ্ত।

তবে একই দলের পদধারী দু’জনই প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নানা ধরনের গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। ফলে, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগের গলার কাটা এখন আওয়ামী লীগই। ভোটের মাঠে একই দলের মধ্যে হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা বিভক্তি। দলীয় কর্মী- সমর্থকরা কাকে রেখে কাকে ভোট দেবেন এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন তারা।

জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একজন হচ্ছেন-আনারস প্রতীকের হাজী আব্দুল মাজেদ খান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলার বলধারা ইউনিয়ন পরিষদের সাত বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ইউপি চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ।তার প্রধান প্রতিপক্ষ নিজ দলের অন্যতম নেতা কাপ- পিরিচ প্রতীকের সায়েদুল ইসলাম। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ জনগণের মতে,আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর কোন্দলের ফলে দলীয় সমর্থকরা পড়েছেন দোটানায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য বিভক্তি। ভোটের মাঠে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় চলছে টানাপোড়েন। উভয়ের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দু‘একটি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নির্বাচনী পরিবেশ অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে।
এদিকে, ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ১৫ বছরের শাসন হাতছাড়া হয়ে গেছে। সেই স্থান দখল করে নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। এ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দু’জনই গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি টুলুর পক্ষে কাজ করেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার আস্থাভাজন এ দু’জনই প্রার্থী হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বর্তমান সাংসদ টুলু । তবে এমপি-মন্ত্রীদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণায় বিধি নিষেধ থাকায় তিনি অনেকটাই নিরাপদে রয়েছেন।

অপরদিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম ভোটের মাঠে না থাকায় তার অনুসারী নেতা-কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

এখানে দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় জন আব্দুল হাকিম। তিনি একাধিকবার উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন । নির্বাচনে তাকে নিয়ে তেমন একটা সাড়া-শব্দ নেই। বরাবরই এই উপজেলাটি বিএনপি’র শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার বিএনপি’র নেতাকর্মী- সমর্থকরা ভোট বর্জন করেছেন। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। আব্দুল হাকিম বিএনপি‘র ভোটের সুযোগ নিতে চাইলেও ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি তাকে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখছেন । এখানে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের হাজী আব্দুল মাজেদ খান ও কাপ-পিরিচ প্রতীকের মো. সায়েদুল ইসলামের মধ্যেই মুলত হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে বলে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

এদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের তালা প্রতীক নিয়ে মো রমিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ- সভাপতির পদ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত টিউবওয়েল প্রতীকের তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ,মাইক প্রতীক নিয়ে অ্যাড. আব্দুস সালাম মোল্লা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে , মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা খাতুন ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতির পদ থেকে বহিস্কৃত আফরোজা রহমান লিপি কলস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

উল্লেখ্য . এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৩ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার, ৩৮৭ ও তৃতীয় লিঙ্গ ৩ জন।