পাবনার চাটমোহরে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের পাট, দিশেহারা কৃষক

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের রূশনাই গ্রামের কৃষক মোঃ রওশন আলীসহ অনেক কৃষকের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ। চোখে মুখে যেন স্বপ্ন ডুবে যাওয়ার হতাশা। তাদের বিলে তলিয়ে যাওয়া জমির পাট কেটে নিয়ে আসার অপেক্ষায়। মোঃ রওশন আলী শ্রমিকের অভাবে নিজেই তিন বিঘা জমির পাট কাটছেন। এ যেন অসহনীয় দুর্ভোগ।

কৃষক মোঃ রওশন আলী বলেন, দুই-তিনদিনের ভিতর হঠাৎ কইরে বিলে পানি আইলো। চোখের সামনে স্বপ্নের পাট ডুইবে যাচ্ছে। এহন তাড়াতাড়ি পাট কেটে আনাই কঠিন হইয়া গ্যাছে। কামলা পাওয়া যাচ্ছে না। পাটের জমিতে পানি এসে পাটের গোড়ার পাট জাগ এসে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তিন বিঘা ভুইয়ে পাট বুনেছিলাম। এমনিতে খরচ বেশি হইছে, তার ওপর পানি ভেতর থেনে পাট কাটে জাগ দেওয়ায় আরো খরচ বাইড়ে গ্যাছে। ক্যাবা কইরে কি করবো বুঝবের পারতিছি না।
শুধু রওশন আলীই নয় তার মতো অনেক কৃষকের একই দুর্দশা। গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই বর্ষার পানিতে তলিয়ে গেছে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল। দেখতে দেখতে বিলে পানি এসে তলিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট। মুহুর্তের মধ্যে সীমাহীন কষ্টের ছাপ কৃষকের চোখে। কিভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবে দিশেহারা তারা।

পাবনা অংশে চাটমোহর উপজেলার চলনবিলের নিমাইচড়া ইউনিয়নের রূশনাই, খলিসাগাড়ি, আফরারদহ, খোলারদহ, কুকড়াগাড়ি, নলখুলাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠের নিচু এলাকায় তলিয়ে যাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট। যেন চোখের সামনে তলিয়ে গেছে সব স্বপ্ন। শ্রমিক সংকটে পাট কেটে দ্রæত তুলতে পারছেন না কৃষক। নিজেরা পানিতে নেমে পাট কাটছেন। সেখান থেকে পাটের জাগ বানিয়ে পাট নিয়ে বিলপাড়ে যাচ্ছেন তারা। তারপর নদীতে বা বাড়ির আঙ্গিনার জমিতে জাগ দিচ্ছেন। এতে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দুর্ভোগ। একদিনে নষ্ট হচ্ছে পাট, অন্যদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ। সবমিলিয়ে এবছর পাট লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।

আবুল কাশেম, জমির উদ্দিন, মন্তাজ আলীসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, বিলে পানি আসার কথা আরও প্রায় ১৫ দিন পর। কিন্তু এবার হঠাৎ করে আগেভাগে বিলে পানি ঢুকেছে। মুহুর্তের মধ্যে পানিতে জমির পাট তলিয়ে যাচ্ছে। যে যেমন পেরেছে দ্রæত পাট কেটে বিলপাড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

কৃষকরা জানান, শ্রমিক সংকটে বিলের পানিতে নষ্ট হচ্ছে পাট। অনেকে নিজেরাই পানিতে নেমে পাট কাটছেন। বেশি টাকায় কিছু শ্রমিক মিললেও, পাট কেটে বিলপাড়ে নিয়ে আসা কষ্টসাধ্য ব্যপার হয়েগেছে। জমিতে কোনো মতে পাট কেটে আটি বেধে নিতে হচ্ছে বিলপাড়ে। সেখান থেকে রাস্তায় তুলে গাড়িতে নিয়ে বাড়ির আঙ্গিনার জমিতে কিংবা নদীতে নিতে হচ্ছে এতে বাড়ছে খরচের হার বেশি। ভারী হবে লোকসানের পাল্লা।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএ মাসুম বিল্লাহ জানান, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে দেশী ১৩৫ হেক্টর, তোষা ৮ হাজার ৪৪৫ হেক্টর এবং মেস্তা জাতীয় পাট আবাদ হয়েছে ১৪০ হেক্টর জমিতে। প্রাথমিক তথ্যে নিচু এলাকার কয়েক হেক্টর জমির পাট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।