পাহাড় ধসের শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটায় রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারে পৃথক দুটি পাহাড় ধসে বুধবার একই পরিবারের চার ভাইবোনসহ পাচঁ শিশু নিহত হয়। এর আগের দিন পাহাড় ধসের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর।

গত তিন দিন টানা ভারী বর্ষণে আবহাওয়া অধিদফতরের এই সতর্কতা এখনও অব্যাহত আছে। এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়াতে পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নেওয়া হাজারো রোহিঙ্গা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কাজ করছে ভূমিধসের অতঙ্ক ও উদ্বেগ। তবে বর্ষায় সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে প্রশাসন এবং রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। পুরোনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।

শরনার্থী ও কর্মকর্তারা জানান, উখিয়া-টেনাফের দুই পাশে পাহাড় ও বন কেটে বসতি গড়েছেন রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, হাকিম পাড়া টেংখালী, মধুরছড়া, শূন্য রেখা এবং টেকনাফের পুটুবনিয়া, শারবাগান, জাদিমুড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে হাজারো রোহিঙ্গা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন। এতে নতুন করে তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং পুটুবনিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে কথা হয় মোহাম্মদ ইউছুপ নামে এক রোহিঙ্গার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত আট মাস আগে রাখাইন রাজ্যে থেকে পালিয়ে এসে এপারে পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু বর্ষা আসার পর থেকে খুব বেশি ভয় কাজ করছে। দিনের চেয়ে রাতে ভয়টা বেশি। গত তিন দিন ধরে ভারী বর্ষণ হওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। তাছাড়া আশ্রয় নেওয়া ঘরগুলো খুবই দুর্বল। বাতাস হলে নড়াচড়া করতে থাকে। এসময় ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। গত কয়েকদিনে এই শিবিরে ৩০টির ওপরে ঘর ভেঙে গেছে।’

উখিয়া মধুরছড়া পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছেন জাহানারা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী। তিনি বলেন, ‘ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢল ঘরে ঢুকে পড়েছে। তার সঙ্গে রয়েছেন মধ্যবয়সী কিশোরী নাজমা বেগমসহ আরও ৮ জন। এর মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত দিল মোহাম্মদ নামে এক শিশু।’

তিনি বলেন, ‘ভারী বর্ষণে না ঘুমিয়ে বসে থাকতে হয়। গত তিন দিন ধরে ঠিকমতো গোসল-খাওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া বৃষ্টির থামার নাম নেই, তাই ঘুমাতে গেলেও নানা চিন্তায় আর ঘুম আসে না। বসে-শুয়ে কোনোরকমে কাটিয়ে দিচ্ছি রাত।’

বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের চান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পানি আটকানো যায় না। ওপর থেকে নিচের দিকে পানি নামলে ঘর স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যায়। তাই রাতে না ঘুমিয়ে বসে থাকতে হয়। টেকনাফের লেদা ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি অনেকের চাল, ডাল ও ছোলা নষ্ট হয়ে গেছে।

ভারী বর্ষণে দুর্ঘটনা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছেন বলে জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের নিরাপদ স্থানে চলে আসার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে যেসব এনজিও সংস্থা রয়েছে তাদেরকে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা বলা হয়েছে। এই ভারী বর্ষণে সব প্রস্তুতির পরও ভয় থেকে যায়, কেননা রোহিঙ্গাদের কোনও দালান কোটা নেই, সবাই ঝুঁপড়ি ঘর। তাই তাদের ঝুঁকিটা বেশি। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর পাহাড় ও বন কেটে সারি সারি বসতি গড়েছে রোহিঙ্গারা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গারা সমস্যার মুখে পড়েছেন, তবে সরকার রোহিঙ্গাদের সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে আবার এনজিও’র মাধ্যমে নিরাপদে রাখা হচ্ছে।