পুরো ঢাকায় তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকায় প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। চলছে তল্লাশি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক ভবনগুলোসহ ট্রেন স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

ওইদিন পুরানো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে হাজিরা শেষে বেগম জিয়া গুলশানে নিজ বাসায় ফিরছিলেন। হাইকোর্টের মাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

এরপর রায়কে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার, গোয়েন্দা তৎপরতা, নজরদারি ও তল্লাশি জোরদার করে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে সমগ্র রাজধানী।

বুধবার সকালে শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, সদরঘাট এবং কমলাপুর ঘুরে দেখা যায়, এসব স্থানগুলোতে বৃদ্ধি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা। তাদের দেখা যায় সতর্ক অবস্থানে থাকতে, তল্লাশি চালাতে। সন্দেহজনক হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে ব্যাগ ও দেহ।

এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেকোনও মূল্যে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

তিনি বলেন, ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে সবসময়ই চেকপোস্ট থাকে, তল্লাশিও চলে। নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনে কখনো কখনো কড়াকড়ি কিংবা বাড়তি পদক্ষেপ নিতে হয়। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেটাই করছি। এখানে নগরবাসীর ভয়ের কিছু নেই। তবে, সবাইকে এক্ষেত্রে সহোযোগিতার আহবান জানবো।

এদিকে কমলাপুর রেল স্টেশনের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছে অসংখ্য পুলিশ। স্টেশনে প্রবেশ মুখ ও ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ ইয়াসিন ফারুক জানান, পুলিশ ও আনসারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কোনো ধরনের নাশকতা কেউ যেন ঘটাতে না পারে সেজন্য সর্বদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ থেকে এপিবিএনও (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) যুক্ত হয়েছে।

সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নিরাপত্তার বিষয়ে কোতয়ালি থানার সিনিয়র এসি বদরুল হোসেন বলেন, আমরা সজাগ আছি। কোনো ধরনের অপতৎপরতা সফল হতে দেয়া হবে না।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ জানান, রায়কে ঘিরে যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও।

তিনি জানান, কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কাউকেই করতে দেয়া হবে না। চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি টহলও জোরদার করেছে র‌্যাব। সারা শহরে সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করেছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে এডিশনাল আইজি সোহেলী ফেরদৌস বলেন, রাজধানী ঘিরে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বুধবার থেকে আগামী তিনদিন পুলিশের পাশাপাশি মাঠে থাকবে সব রক্ষাকারী বাহিনী।

তিনি বলেন, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই তিনদিনকে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় নিয়েছে রাষ্ট্রের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। তাদের সঙ্গে সক্রিয় থাকবে গোয়েন্দারাও। মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশমুখে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নগরীতে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার পাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এছাড়া মহানগরীতে প্রবেশ করা প্রতিটি পরিবহনে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি তৎপর রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে তারা বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।